আগস্ট ৪, ২০১৮
দলিল লেখক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে ঘুষ নিয়ে রশি টানাটানির অভিযোগ দুদকে! সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিস
ডেস্ক রিপোর্ট: ঘুষের টাকা জোর করে আদায় আবার সমোঝতার অভাবে রেজিস্ট্রি বন্ধ- এনিয়েই সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের মধ্যে রশি টানা-টানি শুরু হয়েছে। ফলে রেজিস্ট্রি কার্যক্রম যেমন হাতে গোনা সংখ্যার মধ্যে এসেছে, তেমনি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এর প্রতিকার চেয়ে ৮০ জন দলিল লেখক সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এসব অভিযোগ প্রেরণ করা হয়। সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখকদের ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, জেলা রেজিস্ট্রার মুন্সি রুহুল ইসলাম যোগদানের পর থেকে অনিয়ম দুর্নীতি বেড়েই চলেছে। তিনি জেলার সাতটি উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের রেজিস্ট্রিকৃত দলিল এবং নকল থেকে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা অনৈতিকভাবে সুবিধা নিয়ে থাকেন। অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, জেলার ৭টি উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যে দলিল রেজিস্ট্রি হয়- মাসে দুইবার তার তালিকা জেলা রেজিস্ট্রারের নিকট প্রেরণ করতে হয়। একই সময়ে তালিকা অনুযায়ী দলিল প্রতি ১০০ টাকা করে উৎকোচ প্রেরণ করতে হয়। পাশাপাশি জেলার সাতটি সাব রেজিস্ট্রি অফিসে প্রতিদিন যে নকল উত্তোলন হয়- তার প্রতি নকলে ২০০ টাকা করে জেলা রেজিস্ট্রার মুন্সি রুহুল ইসলামকে উৎকোচ হিসেবে দিতে হয়। এছাড়াও জেলার সখিপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিস বাদে আর প্রত্যেকটি রেজিস্ট্রি অফিসকে মাসে চুক্তিভিত্তিক ৫০ হাজার করে টাকা মাসিক চার্জ হিসেবে দিতে হয়। বিপুল পরিমান এই টাকা দলিল লেখকদের মাধ্যমে স্ব স্ব সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সাব রেজিস্ট্রাররা জনগণের কাছ থেকে উৎকোচ আদায় করে থাকেন। অভিযোগ এখানেই শেষ নয়, গত ১৬ জুলাই সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেন রফিকুল আলম। তিনি যোগদান করেই ঘুষের রেট বাড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, মাল দিতে হবে বেশি, কাগজপত্র থাকবে সঠিক, তাহলে দলিল রেজিস্ট্রি হবে। এর বিপরীতে দলিল লেখকরা বলছেন, কাগজপত্র কম বেশি ত্রুটি থাকে বলেই সাব রেজিস্ট্রারকে মাল দেই। যে দলিলে কাগজপত্র শতভাগ সঠিক সেই দলিলে মাল দিতে রাজি নই। এসব অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়েই কর্মকর্তা আর দলিল লেখকদের মধ্যে রশি টানা-টানি শুরু হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করে চরম ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ ইতোমধ্যেই উঠেছে এ অফিসের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অভিযোগে অনিয়মের খাত হিসেবে আরও জানাগেছে, দলিল প্রতি প্রতি লাখে সাব রেজিস্ট্রারকে দিতে হয় ৫০০ টাকা। এরপর কাগজপত্র একটু ত্রুটি থাকলে তার জন্য আলাদা চুক্তি। সেই চাহিদা এবং চুক্তি অনুযায়ী উৎকোচ দিতে না পারলে দলিল রেজিস্ট্রি বন্ধ আর লেখকদের তো হয়রানি আছেই। দলিল লেখকরা জানান, একটি হেবা দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প লাগে ২শ টাকা, হলফনামা ২শ টাকা এবং সরকারি রেভিনিউ ৪শ ৫০ টাকা। মোট খরচ গড়ে ৯শ ৫০ টাকা। অথচ এসব খরচ বাদে সাব রেজিস্ট্রারকে দিতে হয় আলাদা ৩ হাজার টাকা। জমির মূল্য ৫ লাখ টাকার বাইরে গেলে সেখানে উৎকোচের চুক্তি নতুন করে করতে হয়। তখন প্রতি লাখে ১ হাজার টাকা দিতে হয় নইলে হেবা দলিল রেজিস্ট্রি বন্ধ থাকে। এদিকে একটি নকল দলিল উত্তোলনে সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ টাকা খরচ হয়। সেখানে প্রতি নকলে নেয়া হয় ১২শ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। জনশ্রুতি রয়েছে, নকল প্রতি অতিরিক্ত আদায়কৃত এই অর্থের ২শ টাকা নেন সাব রেজিস্ট্রার ও ২০০ টাকা নেন জেলা রেজিস্ট্রার। বাকি টাকা অফিসের টেবিল এবং দপ্তর অনুযায়ী ভাগ হয়ে থাকে। এসব টাকা দলিল লেখকদের নিকট থেকে উত্তোলন করেন রেকর্ড কিপার বিপ্লবের সহযোগী আমানুর রহমান সুমন। টাকা আদায়ে আরও সঙ্গে রয়েছেন কপিস্ট সালাউদ্দীন ও মহিউদ্দীন। অপর দিকে কিছু দলিল লেখক জমির শ্রেণি পরিবর্তনের নামে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এসব কর্মকর্তাদের সাথে দফারফা করেন। তাদের এসব দলিলের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য জেলা রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দিলে তিনি তার আজ্ঞাবহ কর্মকর্তা কর্মচারী দিয়ে নামমাত্র তদন্ত করেন এবং ভুল তথ্য উপস্থাপন করে প্রতিবেদন প্রদান করেন। সেই বিতর্কিত দলিল নং-১২৯/১৫, ২৫৩৯/১৫, ৯১৩৩/১৫, ৯১৬৯/১৫, ৯৪০৬/১৫, ৮৬৪২/১৫, ১০১২৪/১৫, ১০৪৮৬/১৫, ১০৫৫৩/১৫, ৬১৫১/১৫, ৭১৮৮/১৫, ৭৩৯৯/১৫ ৭২১৯/১৫ সাল। এসব বিতর্কিত দলিলের তদন্ত সঠিক হয়নি মর্মে দুদক ফের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। নানা অজুহাতে ঘুষ গ্রহণকারী এসব কর্মকর্তাদের উৎকোচের টাকা আদায় করেন সদ্য যোগদানকারী অফিস সহকারি আব্দুল জব্বার। পাশাপাশি জেলা রেজিস্ট্রারের চাঁদার টাকা আদায়কারী নকল নবিশ আমানুর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে জেলা রেজিস্ট্রারের নামে হুমকি দিয়ে দলিল লেখকদের নিকট থেকে নিজেও মোটা অংকের চাঁদা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের ফিরিস্তি দুর্নীতি দমন কমিশন, আইজিআর, নিবন্ধন পরিদপ্তর, ঢাকা ও জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরা বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা রেজিস্ট্রার মুন্সি রুহুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি পোন ধরেননি। 8,701,485 total views, 3,817 views today |
|
|
|