Site icon suprovatsatkhira.com

সুন্দরবনের মধু ও মৌমাছি

মো. অলিউর রহমান
সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি। এই বনভূমি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র মোহনায় অবস্থিত এবং বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিস্তৃত। সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বাংলাদেশের মোট আয়তনের ৪.২ ভাগ এবং দেশের মোট বনভূমির ৪৪ ভাগজুড়ে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সুন্দরবন। স্থানীয়ভাবে বাদাবন, প্যারাবন হিসেবে পরিচিত দুনিয়ার সবচে’ বড় এই ম্যানগ্রোভ বন। অগণিত প্রাণিবৈচিত্র্যের সাথে স্থানীয় মৌয়াল-বাওয়ালী, মাঝি, জেলে, চুনরি, মুÐা, মাহাতো জনগণ সম্মিলিতভাবে গড়ে তুলেছে এক বননির্ভর জীবন। সুন্দরবন বাংলাদেশের উপক‚লের রক্ষাকবজ হিসেবে পরিচিত। এ বনের বৃক্ষরাজির মধ্যে ৭৩ শতাংশ সুন্দরী গাছ থাকায় বনের প্রধান বৃক্ষের নাম অনুসারে এ বনের নামকরণ করা হয় সুন্দরবন। বর্তমানে সুন্দরবনে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ, হরিণ, বানর, বন্য কুমিরসহ অন্যান্য প্রজাতির প্রাণী। বাংলাদেশ ও ভারত ভূখÐ জুড়ে সুন্দরবন বিস্তৃত। বাংলাদেশ ভূখÐের আয়তন ৫৫ লাখ ৭ হাজার ২শ ৮৫ হেক্টর। এর মধ্যে ১৫ লাখ ৫ হাজার ৬শ হেক্টর জুড়ে রয়েছে নদীনালা, খাল মোহনা। বাকি ৪০ লাখ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত বিশাল বনাঞ্চল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ বনাঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান বৃক্ষ। যার মধ্যে অন্যতম সুন্দরী, গরান, পশুর, গেওয়া, কেওড়া, ধুন্দল, গোলপাতা ইত্যাদি।
বৃক্ষ ও মাছের পাশাপাশি সুন্দরবন মধু উৎপাদনে বিখ্যাত। সুন্দরবনের মধু গুণে ও মানে অনন্য। বিশুদ্ধতাতেও সুন্দরবনের মধুর জুড়ি নেই। প্রতি বছর হাজার হাজার মণ মধু ও মোম সুন্দরবন হতে উৎপাদন হয়। সুন্দরবনে যে মৌমাছি মধু উৎপাদন করে তার বৈজ্ঞানিক নাম এপিস ডরসেটা। এপিস ডরসেটা বন্য ও হিংস্র মৌমাছি। এরা গাছে বাসা বাঁধে ও এক স্থান হতে অন্য স্থানে চলে যায়। এ বন্য মৌমাছিকে পোষ মানানো যায় না। মৌমাছি ফুলের মধু ও রেণু খেয়ে জীবন ধারণ করে। এপিস ডরসেটা মৌমাছিকে জায়ান্ট মৌমাছিও বলে। মধু ও মোম আহরণের উপর নিভর্র করে সুন্দরবনে গড়ে উঠেছে মৌয়ালি নামের এক ঐতিহ্যগত বননির্ভর পেশা ও জীবন।
বাংলা চৈত্র মাসের অর্ধেকদিন থেকে শুরু হয় সুন্দরবনের মধু সংগ্রহের ঋতু। এ সময় বনবিভাগের স্থানীয় কার্যালয় থেকে স্থানীয় বনজীবীদের এক এক জনের জন্য একটি করে মধু কাটার পাশ এবং বনে প্রবেশের জন্য একটি মৌয়াল দলের নৌকার জন্য একটি বিএলসি দেওয়া হয়। নৌকার মালিক বা দলের প্রধান যাকে সাজুনী বলে তার নামে বিএলসি দেওয়া হয়।
সুন্দরবনের মৌমাছি গ্রামাঞ্চলের মৌমাছি হতে বড়। মৌমাছি সাধারণত মাটি হতে ৫-১৫ ফুট উঁচুতে মৌচাক তৈরী করে। মৌমাছির মধু সংগ্রহ বাড়ার সাথে সাথে মৌচাকের আকার বাড়ে। কোন কোন চাকে ২০-৩০ কেজি মধু পাওয়া যায়। মৌমাছিদের জীবন ধারণ অদ্ভূত। মৌমাছি সমাজবদ্ধ জীব। এরা দলবদ্ধভাবে বাসা বেধে বাস করে। এত ক্ষুদ্র জীব অথচ এদের এত নিয়মকানুন যে এসব নিয়ম কানুন প্রতিটি মৌমাছি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। একটি মৌমাছির দল একটি চাক তৈরী করে। প্রতি বাসায় বা মৌচাকে একজন রাণী মৌমাছি থাকে। রাণী মৌমাছির অধীনে একদল স্ত্রী মৌমাছিও একদল পুরুষ মৌমাছি থাকে। স্ত্রী মৌমাছি প্রজনন অক্ষম থাকে। এদেরকে শ্রমিক মৌমাছি বলে। পরিমানের দিক দিয়ে এক এক মৌচাকে কয়েক হাজার শ্রমিক মৌমাছি থাকতে পারে। পুরুষ মৌমাছি এক কলোনীতে প্রায় কয়েক শত থাকে। পুরুষ মৌমাছিকে ড্রোন বলে। মৌচাকে তিন ধরনের কোষ থাকে। যথা শ্রমিক কোষ, ড্রোন কোষ ও রানী কোষ। শ্রমিক কোষ আকারে ছোট এবং ড্রোন কোষ আকারে বড় হয়। বাসার মধ্যখানে শ্রমিক কোষে মৌমাছিরা অপ্রাপ্ত বয়স্ক মৌমাছি লালন পালন করে। বাসার উপরের অংশে মধু সঞ্চয় করে। বাসার পার্শ্বে পরাগ ও নেকটার সঞ্চয় করে। ড্রোন কোষে মৌমাছি ড্রোন লালন পালন করে। রাণী কোষে রাণী মৌমাছিকে লালন পালন করা হয়।
সুন্দরবনে তিন রকমের মৌমাছি দেখা যায়। এর ভেতর আগুণে মৌমাছিই বেশি চাক বানায় এবং এদের চাকের মধুই সুন্দরবনের সেরা মধু। লালচে আভার মিষ্টি স্বাদের এই মধুকে পদ্মমধু বলে এবং খলিশা ফুল থেকে এই মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা। তাদের মতে, এক ফোঁটা মধু সংগ্রহের জন্য একটি মৌমাছিকে প্রায় আশিটি ফুলে যেতে হয়। সুন্দরবনের মৌমাছিকে স্থানীয়রা পরিযায়ী মৌমাছি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মাঘ মাসের পঞ্চমীর দিন মৌমাছিরা সুন্দরবনে চলে আসে। বনজীবীদের ধারণা এসব মৌমাছি মাঘ মাস থেকে সুন্দরবন এলাকায় আসতে শুরু করে এবং সুন্দরবনে তাদের মধুচক্রের সময়টা পার করে আষাঢ় মাসে আবার চলে যায়। ফুল ফোটার ঋতুতে মৌমাছিরা টের পায় এবং ঝাঁক বেঁধে ফুল ফোটার ঋতু তথা বসন্তকালে সুন্দরবনে চলে আসে।
মৌমাছির মধুগ্রন্থি যখন মধু রসে পূর্ণ থাকে তখন একে বনজীবীরা ‘ভারি পোকা’ বলে। ভারি পোকা তুলনামূলকভাবে ধীরগতিতে ওড়ে এবং ডানে-বামে না গিয়ে সোজা চাকের দিকে উড়তে থাকে। মৌয়ালরা ভারি পোকার চলন এবং গতিপথ দেখে তার পেছন পেছন গিয়ে চাকের সন্ধান করেন।
সুন্দরবনে নানা ধরণের উদ্ভিদ আছে। প্রায় গাছেই ফুল ফুটে। কিন্তু সব গাছ হতে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে না। সুন্দরবনের যে সব গাছ হতে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে সেগুলো হল- খলসী, বাইন, সাদা বাইন, কাকড়া, গরান, গেওয়া, গর্জন, কেওড়া, ছইলা, পশুর, হারগাছা, শিংড়া প্রভৃতি। সুন্দরবনকে লবণাক্ততার উপর নির্ভর করে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- লবণ পানির এলাকা, মধ্যম লবণ পানির এলাকা ও মিঠা পানির এলাকা। সুন্দরবনের পশ্চিম অংশ হল লবণ পানি এলাকার অন্তর্ভুক্ত, শরণখোলা রেঞ্জ হল মিঠা পানির এলাকার অন্তর্ভুক্ত। সুন্দরবনে বেশী মধু উৎপন্ন হয় লবণ পানির অঞ্চল হতে। অর্থাৎ সুন্দরবনে যে চারটি রেঞ্জ আছে তারমধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জে বেশী মধু উৎপন্ন হয়। সংক্ষেপে বলা যায় সুন্দরবনের প্রায় ৯০ ভাগ মধু সাতক্ষীরা রেঞ্জের বনাঞ্চল হতে উৎপন্ন হয়। এর কারণ হল সাতক্ষীরা রেঞ্জের বনাঞ্চলে প্রচুর মধু উৎপাদনকারী গাছ যথা- খলসী, গরান, গেওয়া, কেওড়া প্রভৃতি গাছ আছে। মৌমাছি যে সব গাছ হতে মধু সংগ্রহ করে তার উপর নির্ভর করে সুন্দরবনের মধুকে সাধারণত চার ভাগে ভাগ করা হয়। যথা খলসীর মধু, গরানের মধু, কেওড়ার মধু ও গেওয়ার মধু। তারমধ্যে খলসীর মধু মানে ও গুণে সব চাইতে বেশী ভাল। তারপর যথাক্রমে গরান, কেওড়া ও গেওয়ার মধু। বছরের প্রথমে খলসীর মধু উৎপন্ন হয়। কারণ খলসী ফুলফুটে সবার আগে। মার্চ ও এপ্রিল মাসে খলসী গাছে প্রচুর ফুল থোকায় থোকায় ফোটে। খলসী গাছ নদীর চরে সারিবদ্ধভাবে গোলপাতার পাশে জন্মায়। অনেক দূর থেকে মৌমাছি খলসী গাছের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে আসে।
সুন্দরবনের সকল প্রজাতির গাছে মৌমাছি চাক বানায় না। তবে অনেকসময় পানির উপর হেলে পড়া ডালেও চাক দেখা যায়, সেক্ষেত্রে জোয়ারের সময় অনেকক্ষেত্রে চাক ডুবে যায় এবং এতে চাক ও মৌমাছিদের ক্ষতি হয়। ঝঝযে সকল গাছে হেলান ডাল বেশি থাকে সে সকল গাছে মৌমাছি বেশি চাক বানায়। পশুর, ধুন্দল, কেওড়া ও ঢালচাকা গাছেও চাকের সংখ্যা বেশি দেখা যায়। তবে চান্দা, গোল গাছ, সুন্দরী এবং ঝোঁপে এবং বন লেবু গাছে চাক খুব কম দেখা যায়।
বৈশাখ মাসে সুন্দরবনের লতা জাতীয় গাছে ফুল ফোটে। জ্যৈষ্ঠে ফোটে বাইনের ফুল। এ মাসে ধুন্দুলের ফল ঝড়ে পড়ে ও অংকুরোদগম হয়। আষাঢ় মাসে গোলের ফল ঝরে পড়ে, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে কেওড়া, অগ্রহায়ণে ধুন্দুলের ফুল, ফাল্গুন মাসে গেওয়া ও পশুরের নতুন পাতা দেখা দেয়। সুন্দরবনের প্রায় বৃক্ষের ফলই জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে পাকে এবং শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে সুন্দরবনে গাছের নতুন চারা জন্মে।

সুন্দরবনের সরগরম মধু মৌসুম চৈত্র থেকে বৈশাখ পর্যন্ত। এসময় খলিশার মধু বেশি পাওয়া যায়। তারপর গেওয়ার মধু এবং পরবর্তীতে বাইন, কেওড়ার মধু পাওয়া যায়।
মধু আহরণ ঋতুতে যখন বাড়ির পুরুষেরা বনে থাকে তখন বাড়ির নারীদের নানান নিয়ম পালন করতে হয়। তারা এ সময় বাড়ির বাইরে খুব একটা দূরের এলাকায় যান না। নারীরা এ সময় মাথায় তেল-সাবান ব্যবহার করেন না। এ সময় নারীরা দুপুরবেলা কোনোভাবেই চুলায় আগুণ জ্বালান না। কারণ তারা বিশ্বাস করেন বাড়িতে এ সময় আগুণ ধরালে বন এবং মধুর চাকের ক্ষতি হবে। মধু কাটার মাসে মৌয়ালরা কারো সাথে ঝগড়া বিবাদ করেন না, এ সময় মিথ্যা বলা ও কোনো ধরনের অন্যায় আচরণ থেকে সকলেই বিরত থাকার চেষ্টা করেন।
মধু সংগ্রহের সময় মৌয়ালরা বেশকিছু নিয়ম পালন করেন। একটি মৌয়াল দলের সকলেই দল প্রধান বা সাজুনীর দিকনির্দশনা মেনে চলেন। প্রথমে তারা পূর্বঅভিজ্ঞতা অনুযায়ী বা মৌমাছির গতিপথ দেখে বনের কিনারে নৌকা রেখে বনের ভেতর চাকের সন্ধান করেন। চাক খোঁজার সময় মৌয়ালদের দৃষ্টিটা উপরের দিকে থাকে বলে মৌয়ালরাই বাঘের আক্রমণের শিকার হন সবচেয়ে বেশি।
মৌয়ালদের সকলের মুখ তখন মৌমাছির হুল থেকে বাঁচার জন্য ঢাকা থাকে। তারপর ধারালো দা দিয়ে চাকের কেবলমাত্র মধুর অংশটুকু কাটা হয়। চাকের যে অংশে বাচ্চা ও মৌপোকারা থাকে তাদেরকে রেখে দেওয়া হয়। বড় মুখের পাত্রে মধু সংরক্ষণ করা হয় যাতে মধুর জলীয়বাষ্প উড়ে চলে যায়।
সুন্দরবনে বাংলা চৈত্র মাসের অর্ধেক দিন পর থেকে মধু সংগ্রহের পাশ দেয় বনবিভাগ। কিন্তু মৌয়ালদের মতে, ঋতুগত পরিবর্তন এবং ফুলের প্রস্ফুটনকাল এগিয়ে আসায় বর্তমানে এই পাশ আরো এগিয়ে এনে ৭-১০ চৈত্রের ভেতর করা উচিত। কারণ সময়মত মধু সংগ্রহ না করতে পারলে চাকের ভেতর মধু খাবার হিসেবে জমা থাকে এবং মধু সংগ্রহের প্রয়োজন না থাকায় মৌমাছিরা অলস হয়ে পড়ে এবং চাকের মধ্যে বসে থাকে।
সঠিক পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহের ফলে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হয় না বরং তা সুন্দরবনের প্রাণিবৈচিত্র্যে বিকাশ ও বনের প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে অনেকে মধু সংগ্রহের ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মনীতি মেনে চলে না। তারা পুরো চাক কেটে ফেলে। অনেকে চাকে আগুণ দেয় তাতে বাচ্চা মৌপোকারা মারা যায়। অনেকে মধু কাটার নাম করে বনের গাছ কেটে ফেলে। এটা সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ।’ সুন্দরবনের মৌয়ালরা হতদরিদ্র ও অশিক্ষিত হলেও সনাতন পদ্ধতিতে পেশাগত কারণে তারা মধু আহরণ করেন নিপুণ হাতে। মৌয়ালরা ছোট-বড় দেশীয় নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় দলবদ্ধভাবে সুন্দরবনে মধু আহরণ করতে যায়। তারা একটি গ্রুপে ৭ জন করে থাকেন। এর মধ্যে একজন রান্নার কাজে ও নৌকা পাহারা দেয়। অন্য ৬ জন তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে হাঁড়ি-পাতিল দাসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি নিয়ে মৌচাক খুঁজতে মৌমাছির পিছনে ছুটে চলে। যে দল প্রথমে মৌচাক খুঁজে পাবেন তারা একটি সাংকেতিক শব্দের মাধ্যমে অন্য দলকে জানালে তাৎক্ষণিক সেখানে সবাই জড়ো হয়। এরপর তারা মাথায় গামছা বা কাপড় বেঁধে খড়কুটোর ‘উকো বা তড়পা’ দিয়ে মৌচাক থেকে মৌমাছি তাড়িয়ে চাক কেটে মধু ও মোম সংগ্রহ করেন। সুন্দরবনের মধু সংগ্রহের জন্য মৌয়ালরা এখনও আগুণ জ্বালিয়ে মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকে ফলে প্রতি বছরই লাখ লাখ মৌমাছির মৃত্যু ঘটে। নিয়ম অনুযায়ী আগুণের ধোঁয়া দিয়ে চাক থেকে মৌমাছি তাড়িয়ে মধু সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু অনেক সময় মৌয়ালরা মৌচাকে আগুণ ধরিয়ে দেয়ার কারণে প্রচুর মৌমাছি মারা যায়। এ কারণে সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে এখন আর পর্যাপ্ত পরিমাণের মধু পাওয়া যায় না।
আবহাওয়াগত এ পরিবর্তনের ফলে বনজীবীদের ধারণা বিগত দু’বছরে সুন্দরবনের মৌমাছিদের আচরণগত পরিবর্তনও ঘটেছে। এতে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বনজীবীদের মৌমাছির কামড় বেশি খেতে হয়েছে। একটি মৌপোকা মারলে নির্দিষ্ট জরিমানা দেয়ার বিধান থাকলেও বনবিভাগ গুরুত্বপূর্ণ বন আইনগুলো মৌয়ালদের জানাচ্ছে না। নতুন প্রজন্মের মৌয়ালরা সুন্দরবন এলাকায় বেড়ে উঠলেও তাদের অনেকেরই ঐতিহ্যগত মধু সংগ্রহের জ্ঞান ও পদ্ধতিগুলো জানা নেই। এখানে সঠিক নিয়মে মধু সংগ্রহ করলে বনভূমির কোনো ক্ষতি হয় না, বরং এটি বনভূমির প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনারই একটি অংশ হিসেবে দেখেন বিশেষজ্ঞরা। লেখক: সহকারি অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version