Site icon suprovatsatkhira.com

মালিক সমিতির অবেহলায় ভোগান্তিতে লাখো মানুষ

এমএম আব্দুল্লাহ আল মামুন, মুন্সীগঞ্জ (শ্যামনগর): মালিক সমিতির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ গেটলক সার্ভিস। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাতক্ষীরা-দেবহাটা-কালিগঞ্জ-শ্যামনগরসহ এই রুটে চলাচলকারী লাখো মানুষ। বাস মালিক সমিতির নেতারা ও সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ বারবার প্রতিশ্রæতি দিলেও এই রুটে চালু হয়নি গেটলক সার্ভিস।
জানা যায়, জেলা শহরের সাথে শ্যামনগর, কালীগঞ্জ, দেবহাটা উপজেলার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ সড়ক। ১৯৯৬ সালে শ্যামনগরের উপক‚লীয় এলাকাসহ কালিগঞ্জ ও দেবহাটার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার কথা মাথায় রেখে এই রুটে মুন্সীগঞ্জ-খুলনা গেটলক সার্ভিস চালু করা হয়। সার্ভিসটি অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা নিয়ে একটানা ২০১৩ সাল পর্যন্ত চলে। কিন্তু লোকাল বাস মালিকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মারাত্মক আকার ধারণ করায় সার্ভিসটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। পরে মালিক সমিতি, প্রশাসন ও কয়েকজন সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপে মুন্সীগঞ্জ-সাতক্ষীরা গেটলক সার্ভিস পুনরায় চালু। যা ২০১৫ সাল যেতে না যেতেই আবারো বন্ধ হয়ে যায়। সাভিসটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, পর্যটকসহ লাখ লাখ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। শ্যামনগরের মানুষকে প্রতিদিন দুইবার বাস পরিবর্তন করে জেলা শহরে আসত হয়। এতে পথেই দিন কেটে যায় মানুষের।
সূত্র জানায়, যখন মুন্সিগঞ্জ-খুলনা গেটলক সার্ভিস চালু ছিলো তখন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আধা ঘন্টা পরপর এবং দুপুরের পর থেকে ১ ঘন্টা পর পর বাস চলাচল করতো। খুুলনা-মুন্সীগঞ্জ গেটলক সার্ভিসের সময় নির্ধারণ করা ছিল মাত্র চার ঘণ্টা। অবশ্য তার অনেক আগেই মানুষ তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যেত। সকালে যাত্রীরা খুলনায় যেয়ে দৈনন্দিন কাজ সেরে বিকালে শ্যামনগর-মুন্সীগঞ্জ ফিরে আসত। আবার খুলনার যাত্রীরা সকালে বেরিয়ে মুন্সীগঞ্জ শ্যামনগর ঘুরে দৈনন্দিন কাজ সেরে বিকালে ঘরে পৌঁছাতো। খুব অল্প সময়ে এ সার্ভিসটি জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলো। এটা বন্ধ হওয়ায় শুধু এলাকার মানুষের ভোগান্তি বাড়েনি- এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে উপক‚লীয় এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যেও। ব্যবসায়ীরা সরাসরি খুলনা থেকে তাদের পণ্য এ সার্ভিসে পরিবহন করতো। এতে একদিকে তাদের যেমন সময় সাশ্রয় হতো অন্যদিকে পরিবহন খরচ কম হতো। শুধু তাই নয় গেটলক সার্ভিস না থাকায় পর্যটকদের সুন্দরবনে ভ্রমণে যাওয়ার আগ্রহ কমেছে। বর্তমান পরিবহন ব্যবস্থায় সাতক্ষীরা থেকে মুন্সিগঞ্জ যেতে দিনের একটা বড় সময় চলে যায়। দুই ঘণ্টার গেটলক সার্ভিসের পথে এখন সময় লাগে প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। মুন্সীগঞ্জ থেকে কালিগঞ্জ পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট, কালীগঞ্জ থেকে সাতক্ষীরা আসতে প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। আর দুই বাস পরিবর্তন করতে যাত্রীদের আরও একঘণ্টা বেশি সময় লেগে যায়।
বাস যাত্রী বিশ্বজিত কর্মকার বলেন, মুন্সিগঞ্জ থেকে সাতক্ষীরায় যেতে আমাদের পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা সময় লাগে। বাসেই যদি এতো সময় চলে যায় তাহলে প্রয়োজনীয় কাজ মেটাবো কি করে।
কর্মজীবী ফজলুল হক বলেন, গেটলক সার্ভিস যখন ছিলো তখন এ এলাকার মানুষের ভোগান্তি অনেক কম ছিলো। অল্প সময়ে কাজ মিটিয়ে বাড়ি ফিরতে পারতাম। কিন্তু এখন যে অবস্থা তাতে মুন্সিগঞ্জ থেকে কোন মানুষ ডাক্তার দেখাতে জেলা শহরের গেলে তাদের বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে যেতে হয়। কারণ ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায় কিন্তু রাস্তা শেষ হয় না। দ্রুত গেটলক সার্ভিসটি চালু করলে ভোগান্তি কমবে।
কয়েকজন সরকারি-বেসরকারি চাকুরীজীবী জানান, আমাদের জেলা শহর থেকে শ্যামনগর, কালিগঞ্জে অফিস করতে যেতে হয়। কিন্তু এতো জটিলতা যে সময় মত অফিসে পৌঁছানো খব কষ্টকর হয়ে যায়।
বাস শ্রমিক সমিতির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এটা শ্রমিক সমিতির কোন বিষয় নয়। কালীগঞ্জ-সাতক্ষীরা বাস মালিক সমিতির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গেটলক সার্ভিস বন্ধ রয়েছে।
সাতক্ষীরা-৪ আসনের এম.পি এসএম জগলুল হায়দার বলেন, আমি অনেকবার বাস মালিক কর্তৃপক্ষকে গেটলক সার্ভিসটি চালু করতে অনুরোধ করেছি। আমার মনে হয় তারা আমার অনুরোধের সম্মান দেখিয়ে হাজার হাজার যাত্রীদের ভোগান্তির কথা ভেবে অচিরেই সার্ভিসটি চালু করবেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version