সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন। পদ্মা পাড়ের মানুষ তিনি। ঢাকার জুরাইন আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক ও ১৯৯১ সালে তেজগাঁও সরকারি স্কুল থেকে এসএসসি উত্তীর্ণ হন। ১৯৯৩ সালে নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৯৮ সালে অনার্স এবং ১৯৯৯ মাস্টার্স করেন। পরে ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ নিয়ে উন্নয়ন অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেছেন। ২০০১ সালে কুমিল্লা কালেক্টরেটে সহকারি কমিশনার হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করে ফেনী সদরের এসিল্যান্ড, প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্টেট হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, ইউএনও হিসেবে গাইবান্ধা সদরে, পরে সিনিয়র সহকারি সচিব হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি ঢাকা কালেক্টরেট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং সর্বশেষ উপসচিব হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ৬ মার্চ সাতক্ষীরায় যোগদান করেছেন জেলা প্রশাসক হিসেবে। ‘সমকালীন উন্নয়ন ভাবনা: প্রেক্ষাপট সাতক্ষীরা’ নিয়ে সুপ্রভাত সাতক্ষীরার সাথে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গাজী আসাদ, আরিফুল ইসলাম রোহিত ও এসএম নাহিদ হাসান
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: কেমন আছেন?
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার জন্মস্থান ও পরিবার-পরিজন সম্পর্কে জানতে চাই-
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: ১৯৭৬ সালের ২২ ডিসেম্বর আমার জন্ম, গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর সীমান্তবর্তী গোদাগাড়ী উপজেলায়, পদ্মার পাড়ে। এখানে ইলিশ মাছ ও আম পাওয়া যায়। মানুষ খুব সাধারণ। খুব সহজ-সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। আমার বাবা মরহুম এস্তার হোসেন বিএডিসিতে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০০০ সালে এলপিআরে যান। মা সেতারা হোসেন আমার সাথে থাকেন। আমরা দু’ভাই বোন। বোন ছোট, ডাক্তার ছিলো। সে ২৩তম বিসিএস পরীক্ষায় স্বাস্থ্য বিভাগে মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়েছিলো। কিন্তু ২০১০ সালে এক দুর্ঘটনায় মারা যায়। আমার স্ত্রী সাদিয়া নুসরাত হোসেন। সে ইংরেজিতে অনার্স এবং উন্নয়ন স্বাস্থ্যে মাস্টার্স করেছেন। আমার তিন ছেলে। বড় ছেলের বয়স নয় বছর, মেঝো ছেলের বয়স সাত বছর এবং ছোট ছেলের বয়স তিন বছর। তারা আপাতত ঢাকায় থাকে। বড় ছেলে ও মেঝো ছেলে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার শিক্ষাজীবন-
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: ঢাকার জুরাইন আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক, ১৯৯১ সালে তেজগাঁও সরকারি স্কুল থেকে এসএসসি। ১৯৯৩ সালে নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি। ১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। ১৯৯৮ সালে অনার্স-মাস্টার্স শেষ হয়। তারপর ২০০৭-০৮ সালে ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ নিয়ে উন্নয়ন অর্থনীতিতে মাস্টার্স করি।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: ছোটবেলার কোন স্মৃতি আপনার সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে?
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: আমি ক্রিকেট ভালবাসি। ছোট বেলায় ক্রিকেট খেলতাম। মাঝে মাঝে খেপ খেলতে যেতাম। বাবা খেলা করাটা পছন্দ করতেন না। আমরা তখন মনিপুরি পাড়ায় থাকতাম। আমাদের বাসার কার্নিশে আমার ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম লুকিয়ে রাখতাম। বাবা একদিন সেগুলো ফেলে দিয়েছিলো। আমার পাড়ার বন্ধুরা কুড়িয়ে গুছিয়ে রেখে ছিলো। তবে বাবা পরে আমার খেলা দেখতে গিয়েছিলেন। আমি একদিন ম্যন অব দ্য ফাইনাল হয়েছিলাম। বাবা বলেছিলো তুমি তো ভালই খেলো। তবে খেলা নিয়ে বাবা রাগ করতেন। এইগুলো খুব মনে পড়ে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার পূর্বের কর্মস্থল সম্পর্কে কিছু বলুন-
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: ২০০১ সালে কুমিল্লা কালেক্টরেটে সহকারি কমিশনার হিসেবে চাকরি জীবন শুরু। ওখানে তিন বছর থাকার পর ফেনী সদরের এসিল্যান্ড হিসেবে যোগদান করে সোয়া তিন বছর কাজ করি। তারপর প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্টেট হিসেবে ছয় মাস থাকি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ওখান থেকে ইউএনও হিসেবে গাইবান্ধা সদরে ১৪ মাস ছিলাম। তারপর সেখান থেকে স্কলারশিপ নিয়ে লন্ডনে যাই। লন্ডন থেকে ফিরে সিনিয়ির সহকারি সচিব হিসেবে স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগদান করি। ওখানে দু’বছর থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ে ছয় মাস কাজ করি। তারপর সিনিয়র সহকারি সচিব হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগাদান করি। পরবর্তিতে ঢাকা কালেক্টরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করি। এরপর পদোন্নতি পেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে উপসচিব হিসেবে তিন বছর জলাবায়ু অর্থায়ন নিয়ে কাজ করেছিলাম। যে কাজটা প্রথমে আমার হাত দিয়েই শুরু হয়। এরপর গত ৬ মার্চ সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করি।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: এখানে যোগদান করেছেন চার মাস হয়েছে- সাতক্ষীরা কেমন লাগছে?
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: সাতক্ষীরা ভালো লেগেছে। তবে পোস্টিং এর সময় প্রথমে ভয়েছিলাম। কারণ সাতক্ষীরা নিয়ে নেতিবাচক প্রচার ছিলো। বিশেষ করে ২০১৩ সালের সহিংসতা নিয়ে শুনতাম। আর এই অঞ্চলে আমার প্রথম কাজ করতে আসা। কিন্তু আসার পর ভালো লেগেছে এবং ধারণা পাল্টে গেছে। সাতক্ষীরার মানুষ খুব ভালো। এখানে অনেক প্রাচুর্যতা রয়েছে। এখানের খাবার-দাওয়ার ভালো। এখানকার সাংস্কৃতিক অঙ্গন খুবই ভালো। খেলাতেও এগিয়ে আছে। তবে সাতক্ষীরাতে প্রচুর গরম এবং খাওয়ার পানির সমস্যা রয়েছে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: যোগদানের পর আপনার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কঠোরতা ইতোমধ্যে জেলাব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে- এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোন বাধার সম্মুখীন হয়েছেন?
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: সরকারি সিদ্ধান্ত আইনানুগভাবে বাস্তবায়ন করা এবং সুশাসন নিশ্চিত করা আমার কাজ। সে দিক থেকে আমার প্রধান ও প্রথম লক্ষ্য ছিলো- সরকারের গণমূখী সিদ্ধান্ত ও উন্নয়ন পরিকল্পনা সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। মূলত সেই আঙ্গিকে সিন্ধান্তগুলো নিয়েছি ও বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে কঠোরতা বা নমনীয়তার প্রশ্ন আসে না, প্রশ্ন আসে সুশাসন নিশ্চিত করার। যোগদানের পর থেকে সেই কাজটা করে যাচ্ছি। কোন বাঁধা পায়নি। বরং সবার আন্তরিক সহযোগিতা পাচ্ছি এবং সহযোগিতা পাবো আশা করছি।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় যোগদান করেছেন- এক সময় সরকারি সিদ্ধান্তে চলেও যেতে হবে- যাওয়ার সময় কেমন সাতক্ষীরা রেখে যেতে চান-
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: যেহেতু সরকারি চাকুরি করি- একটা নির্ধারিত সময় আছে। সরকার যে দায়িত্ব দেবে সেটা পালন এবং যথাযথভাবে আন্তরিকতার সাথে পালনের চেষ্টা করি। একটা সময় আমাকেও চলে যেতে হবে। তো চলে যাওয়ার সময় যেটা রেখে যেতে চাই- সেটা হচ্ছে একটি পরিচ্ছন্ন এবং উন্নত সাতক্ষীরা। যেখানে সুশাসন নিশ্চিত হবে এবং জনভোগান্তিমুক্ত প্রশাসন থাকবে। সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। সেই চাওয়াটা দুই’ধরণের। একটা প্রশাসন কেন্দ্রিক এবং আরেকটা জনগণ কেন্দ্রিক। প্রশাসন কেন্দ্রিক হচ্ছে জনমূখী এবং কোন ধরণের ভোগান্তি থাকবে না- সরকারি পরিসেবাগুলো স্বচ্ছ ও সুন্দর এবং দুর্নীতিমুক্তভাবে জনগণ পাবে। আমি এমনটাই দেখে যেতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ অর্জনের লক্ষ্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষার ক্ষেত্রে উন্নত সাতক্ষীরা দেখে যেতে চাই।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সুন্দরবনের বড় অংশ সাতক্ষীরা জেলায়- এছাড়া বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও প্রতœতাত্তি¡ক স্থাপনা সাতক্ষীরার গুরুত্ব বহন করে- পর্যটন শিল্পের এই সম্ভাবনা বিকাশে জেলা প্রশাসন কি ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করবে-
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: সুন্দরবনের বড় অংশ সাতক্ষীরা জেলায়। এছাড়া প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা সাতক্ষীরার গুরুত্ব বহন করে। আমরা আমাদের ব্র্যান্ডিং এ বলেছি ‘সড়ক পথে সুন্দরবন সাতক্ষীরার আকর্ষণ’। একমাত্র সাতক্ষীরা জেলাতে সড়ক পথে সুন্দরবনে যাওয়া যায়। কিন্তু গত তিন মাসে আমার মনে হয়েছে এক্ষেত্রে বড় সমস্যা হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ সড়কের উন্নয়ন দরকার। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রেলপথ হয়ে গেলে সম্ভাবনা বাড়বে। পদ্মা সেতুও বড় ভূমিকা রাখবে। কারণ তখন ঢাকার সাথে দূরত্ব কমে যাবে। পর্যটক আসবে। আর একটা বিষয় দেখতে হবে- সুন্দরবনের ওখানে থাকার বিষয়টা। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে রিসোর্ট নির্মাণ হয়েছে। আরো করতে হবে। এক্ষেত্রে অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দিতে হবে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খালা ও বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারিভাবে নির্মিত আকাশনীলা নিয়ে আরো কাজ করতে হবে। এটা আরো উন্নত ও বড় করতে চাই। আকাশনীলার সামনে আরো একটা ইকোপার্ক নির্মাণের কাজ চলছে। নীলডুমুরে একটা রিসোর্ট করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এখানে পরিকল্পিতভাবে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা দরকার। অবাধে বনে প্রবেশ করা যাবে না। বিশ্বে কোথাও এটা হয় না। এক্ষেত্রে সংরক্ষিত বনাঞ্চল অক্ষুণ্ন রেখে পর্যটন নিয়ে কাজ করতে চাই। আর আমরা পর্যটন বান্ধব সুন্দরবন চাই। এক্ষত্রে সরকারিভাবে সকল সহযোগিতা করা হবে। আমাদের একটু প্রচার দরকার। আমাদের প্রচার কম হচ্ছে। দেখবেন ইত্যাদি হওয়ার পর আকাশনীলার প্রচার বেড়েছে। শুধু সুন্দরবন নয় দেবহাটায় মিনি সুন্দরবন, শতবর্ষী বট গাছ, তালা, আশাশুনিসহ সকল উপজেলাতে পর্যটন স্পট আছে- এগুলো নিয়েও কাজ করতে চাই। এক্ষেত্রে পিপিপি-পাবলিক প্রাইভেট পাটর্নারশিপের মাধ্যমে এই কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: শোনা যায়, সাতক্ষীরায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে- এই প্রক্রিয়া কতদূর মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছি। বিল আবাদিনির ওখানে সরকারের ১৫৯ একর জমি আছে। এর মধ্যে আমরা ১০০.৩৩ একর অলরেডি দখল মুক্ত করেছি। বাকী যে ৫৯ একর আছে তার মধ্যে ৩৩ একর জমি নিয়ে মামলা চলছে। আদালতের রায়ের অপেক্ষায় আছি। আর বাকি ২৬ একর অবৈধ দখল মুক্ত করা হবে। আমরা অলরেডি ১০০.৩৩ একর জমি নিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অথরিটিতে পাঠিয়েছি। তারা খুব শীঘ্রই পরিদর্শনে আসবে। আমরা আশা করছি এখানে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। এটা হলে সাতক্ষীরার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও বেকারত্ব কমবে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর থেকে কলকাতার দূরত্ব সবচেয়ে কম, মাত্র ৮৪ কিলোমিটার- এজন্য এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু এ বন্দর দিয়ে সব পণ্য আমদানি বা রপ্তানির অনুমতি নেই- জেলার স্বার্থে এই সীমাবদ্ধতা কীভাবে কাটানো যায় বলে মনে করেন-
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: ভোমরা স্থলবন্দরে সীমাবদ্ধতা আছে। এটা দূর করতে হলে অবকাঠামোগত সুবিধা ও হ্যান্ডেলিং সুবিধা বাড়াতে হবে এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য তালিকার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। যে নির্ধারিত পণ্য তালিকা আছে- সেটা ভেঙে বড় করতে হবে। এখানে একটা ফুল কমিশনারেট ও ওয়্যার হাউজ হবে। এবং ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণ হয়েছে ও কাজ শুরু হয়েছে। পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হচ্ছে পোর্টে একটা ব্রিজ আছে। আরো একটা দরকার। সেটা করা হবে। যাতে নির্বিঘ্নে পণ্য আসতে পারে। ভোমরার রাস্তাটাও ভালো না। সেটা নিয়ে অবশ্য সড়ক ও জনপদ বিভাগ একটা পরিকল্পনা করেছে। দ্রæত সেটা বাস্তবায়ন হবে। ভোমরা বন্দরের উন্নয়নের জন্য রেল লাইন অপরিহার্য। ভোমরা-কলকাতার দূরত্ব বুঝিয়ে রেললাইন দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: উপজেলাগুলোতে নির্মাণাধীন ইকোপার্কগুলো ইতোমধ্যে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে- এগুলো সম্প্রসারণ বা আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই-
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: ইকোপার্কগুলো নির্মাণের কাজ আমরা শুরু করেছি। এগুলো এগিয়ে নিতে প্রচুর টাকা লাগবে। সেক্ষেত্রে আমরা বলেছি পিপিপি- পাবলিক প্রাইভেট পাটর্নারশিপের মাধ্যমে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে চাই। এক্ষেত্রে আমরা বাঁকালে কাজ শুরু করেছি। অন্য জায়গাতেও করবো। আমাদের এটা পরিকল্পনাতে আছে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: শিক্ষার মান-উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন-
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: শিক্ষার মান উন্নয়নে দুটো বিষয় দরকার, আইনের শাসন এবং সচেতনতা। শুধু প্রশাসনের একার পক্ষে শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে প্রশাসন, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের সমন্বয় দরকার। আমরা প্রশাসন আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। কিন্তু যারা শিক্ষকমণ্ডলী উনারা অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে পড়াচ্ছে। যার পলে মূল ক্লাসে শিক্ষার্থী আসছে না। শিক্ষকদের এই ধরণের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলেছি আমরা এই ধরণের কাজ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেবো। বর্তমান সরকার শিক্ষকদের দাবি ক্রমান্বয়ে পূরণ করছে। সুতরাং তাদের কাছ থেকে দায়িত্ববোধ আশা করছি। আর এর ব্যত্যয় ঘটলে কোন ছাড় দেওয়া হবে না। আর একটা বড় সমস্যা হচ্ছে কোচিং সেন্টার। ব্যাঙের ছাতার মত অনেক কোচিং সেন্টার গজিয়ে উঠেছে। আমরা খুব দ্রæত এগুলো বন্ধ করবো। এভাবে এগুলো চলতে পারে না। আর একটা বিষয়- অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। শুধু জিপিএ-৫ এর পিছনে ছুটলে হবে না। গুণগত শিক্ষার মান রক্ষা করতে হবে। মনে রাখতে হবে সংখ্যা পরে, মান আগে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার মাছের সুনাম দেশজুড়ে- এছাড়া সাতক্ষীরা থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমান চিংড়ি রপ্তানি হয়- কিন্তু এখানে এখনো কোন রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি- এই বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কোন উদ্যোগ আছে কি না?
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: মাছের সুনাম আছে, কিন্তু প্রক্রিয়াজাতকরণ গড়ে ওঠেনি। আমরা আশা করছি অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে এটা হবে। তবে, চাষের দিক দিয়ে আমরা এখনো পিছিয়ে। যেখানে প্রতি হেক্টরে থাইল্যান্ডে ৫০০০ কেজি এবং ভিয়েতনামে ৭০০০ কেজি চিংড়ি উৎপাদন হয়। সেখানে আমাদের মাত্র ২৫০ কেজি উৎপাদন হয়। এটার উন্নতি ঘটাতে হবে। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে চিংড়ি চাষ করতে হবে। আর একটা বিষয় অপদ্রব্য পুশ করার ফলে আমাদের বাজার নষ্ট হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু আইন প্রয়োগ নয়, সচেতন হতে হবে। চিংড়ি চাষীদের একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। সেটা মানতে হবে। চিংড়ি চাষের দূষিত পানি যেখানে-সেখানে নিষ্কাশন করা যাবে না। প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো দখল করে চাষ করা যাবে না। এটা বন্ধ করতে হবে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় প্রচুর খাস জমি রয়েছে। এসব খাস জমি ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত করার ব্যাপারে জেলা প্রশাসন কী ভাবছে-
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: এখানে এসে দেখেছি সাতক্ষীরাতে প্রচুর খাস জমি আছে। খাস জমিগুলোর ক্ষেত্রে সমস্যা- আমাদের হাতে পর্যাপ্ত ডাটাবেজ ছিলো না। কিন্তু আমি আসার পর বলেছি, আগামী সেপ্টম্বরের মধ্যে পর্যাপ্ত ডাটাবেজ প্রস্তুত করতে। সেটা হবে এবং তারপর সব খাস জমি দখল মুক্ত করা হবে এবং যেগুলো ভ‚মিহীদের দেওয়ার যোগ্য সেগুলো তাদের মাঝে বণ্টন করা হবে। আর যেগুলো প্রাকৃতিক জলাধার, খাল-বিল, নদী নালা- বন্দোবস্ত দেওয়ার যোগ্য নয় সেগুলো অবাধ থাকবে। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, যারা অবৈধভাবে সরকারি জমি ভোগদখল করছে- তা আর করতে দেওয়া হবে না।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: জেলা সদর, তালা উপজেলা ও কলারোয়া উপজেলায় বছরের একটি বড় সময় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়- জলাবদ্ধতা নিরসনে কোন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন-
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: জলাদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। আপনারা দেখেছেন বিচ্ছিন্নভাবে কিছু নদী খনন করা হয়েছে। কিন্তু নদী খননের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে- সেটা হচ্ছে – সমন্বয়হীনতা ও পরিকল্পনার দুর্বলতা। নদী খননের ক্ষেত্রে নদীর মাঝ বরাবর খনন করা হয়েছে এবং মাটিগুলো দু’পাশে রাখা হয়েছে। ফলে এটা আরো সমস্যা বাড়িয়েছে। এতে নদী সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে এবং দু’পাশ দখল হয়েছে। নদীগুলোর আন্তঃসংযোগ ঠিক রেখে খনন করতে হবে। যাতে জলাবদ্ধতার সময় পানি অপসারণ করা যায়। আর এটা করতে হবে জাতীয়ভাবে। কারণ এখন এত সমস্যা দাঁড়িয়েছে- যেটা জেলা প্রশাসনের পক্ষে এককভাবে মোকাবেলা সম্ভব নয়। তবে জলাবদ্ধতা দূর করতে জলাধার ও নদীর মধ্যে পাটা বা অবৈধ বাঁধ অপসারণ করা হবে। সে ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেওয়া হবে না। সুখের বিষয় হচ্ছে সরকার এ বিষয়ে সচেতন রয়েছে এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় দেশব্যাপী নদী-খাল খননের পরিকল্পনা করেছে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা-নাভারণ রেললাইন বাস্তবায়ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিল। এই প্রকল্প নিয়ে কয়েকটি সমীক্ষাও হয়ে গেছে- এটা কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হতে পারে?
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: এটা নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে বিনিয়োগ প্রসার অন্যতম। এ উদ্যোগের আওতায় রেল লাইনটি সহসা হবে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সাতক্ষীরার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলুন-
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: সাতক্ষীরার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেকোন সময়ের চেয়ে এখন ভালো। সকলের সহযোগিতায় আমরা সেটা সব সময় রাখতে চায়।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী জেলা। এ জেলায় মাদকের ভয়াবহতা অনেক বেশি- মাদক প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন-
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: মাদক ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে বর্তমানে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। সারা দেশে মাদকের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অভিযান চলমান রয়েছে। চলমান থাকবে। সাতক্ষীরাতে মাদকের ভয়াবহতা রয়েছে। শুধু আইনের প্রয়োগ নয় এটা বন্ধে সচেতনতাও দরকার। তবে মাদকের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা শহরের প্রাণ- প্রাণ সায়ের খাল। এ খাল সংরক্ষণে জেলা প্রশাসনের পদক্ষেপ সম্পর্কে কিছু বলুন-
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: প্রাণ সায়ের খাল অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে এবং এর দু’পাশে সুইস গেট দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করা হয়েছে। এটা রোধে পৌরসভা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে কাজ করতে হবে। তবে খুব দ্রুত অবৈধ দখল বন্ধে কাজ করা হবে। একটা সুখের কথা হচ্ছে- জার্মান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে একটা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যেখানে এটা খনন করতে ২৬০ কোটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবং এটা দ্রুত শুরু হবে। এই খননের সময় এর দু’ধারের সকল অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দেওয়া হবে এবং দখল মুক্ত করা হবে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার ক্রীড়াঙ্গন এখন বেশ মুখরিত- জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি হিসেবে জেলার ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতে আপনার পরিকল্পনা জানতে চাই-
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: সাতক্ষীরার ক্রীড়াঙ্গন খুবই ভালো। এখানে শুধু ক্রিকেট নয়- ফুটবল, শ্যুটিং, ভলিবলসহ বিভিন্ন খেলা খুবই এগিয়ে। আমরা চাই খেলোয়াড়রা সবসময় মাঠে থাকবে। খেলোয়াড় ও সংগঠকদের খেলার মাঠে থাকতে হবে। যাতে মান আরো উন্নত হয়। আমরা একটা বার্ষিক পরিকল্পনা করেছি। ফলে সারা বছর মাঠে খেলা চলবে। শুধু জেলা নয়, উপজেলাগুলোতেও খেলা নিয়ে ব্যস্ত রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এটা পরিষ্কার করে বলতে চাই, যারা ক্রীড়ার সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের টেবিলে না থেকে মাঠে থাকতে হবে। যাতে খেলার মান উন্নয়ন হয়।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার উন্নয়নে প্রশাসনের পাশাপাশি জনগণ কী ভ‚মিকা রাখতে পারে অর্থাৎ জনগণের কাছে প্রত্যাশা কী-
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: জনগণের কাছে প্রত্যাশা- সুনাগরিক হিসেবে সুনাগরিক সুলভ আচরণ করুন। শুধু প্রশাসন নয়, আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সকলকে কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, তথ্য দিয়ে সহায়তা, ভুল তথ্য না দেওয়া এবং সচেতন হতে হবে। জনগণের কাছে প্রত্যাশা করি- আমাদের পাশে থেকে একটি সমৃদ্ধ সাতক্ষীরা তথা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ বির্নিমাণে সহযোগিতা করবেন।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনাকে ধন্যবাদ
মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন: সুপ্রভাত সাতক্ষীরাকেও অনেক ধন্যবাদ।