ডেস্ক রিপোর্ট: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলা ঠেকাতে বাদীর দুই ভাই ও মায়ের নামে চুরি, ছিনতাই ও মারপিটের মিথ্যা মামলা করে বাদী ও তার পরিবারকে হয়রানির চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে আসামির বিরুদ্ধে বাদী ও তার পরিবারের সদস্যদের খুন করার উদ্দেশ্যে দা নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এঘটনায় সাতক্ষীরা আদালতে ১০৭/১১৭ (গ) ধারায় মামলা ও সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। যার নং-৬৪৯ তাং-১২.০৭.১৮। এ মামলার আসামি জেলা পুলিশ সুপারের স্টেনোর গাড়ি চালক হওয়ায় ক্ষমতার দাপটে বাদীসহ পুরো পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সাতক্ষীরা শহর উপকণ্ঠের মাগুরা দক্ষিণ পাড়ার রফিকুল ইসলামের মেয়ে সালমা খাতুনের সাথে ২০ বছর আগে বিয়ে হয় একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ইসমাইল হোসেনের। দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে তাদের সংসারে চারটি মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। ইতোমধ্যে বড় মেয়ে ডালিয়াকে বিয়ে দিলে তারও একটি সন্তান হয়। এরই মধ্যে কয়েক বছর পূর্বে শহর উপকণ্ঠের খড়িবিলা গ্রামের জেএমবি সদস্য (বর্তমানে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে) মোনতাজ সরদারের মেয়ে দুই সন্তানের জননী আয়সা খাতুনকে বিয়ে না করেই ইসমাইল হোসেন শহরের কামালনগরের মিলন সরদারের বাড়িতে ভাড়া থাকতে শুরু করে। এরই জেরে স্ত্রী সালমাকে নানাভাবে নির্যাতন করে আসছে পাষ- স্বামী ইসমাইল।
গত ১৮ জুন সকালে সালমা ইসমাইল হোসেনের কামালনগরের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখে সেখানে ইসমাইল ও আয়সা খাতুন আছে। বিষয়টি জানতে চাইলে সেখানে কেন গেল এমন প্রশ্ন রেখেই সালমাকে পিটাতে শুরু করে ইসমাইল। এক পর্যায়ে মাথায় চরমভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয় সালমা। এঘটনায় ওইদিন সালমাসহ তার পরিবার পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমানের সাথে দেখা করে বিষয়টি জানালে জড়িতদের গ্রেপ্তার পূর্বক মামলা নেয়ার নির্দেশ দেন সদর থানার ওসিকে। তিনি যথাযথ সময়ে অভিযান চালিয়ে ইসমাইলের বড় ভাই ডাকাতি মামলার আসামি মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করেন। তবে, পরিস্থিতি বুঝে পালিয়ে যায় ইসমাইল।
ঘটনার পর থেকে পলাতক অবস্থায় হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালিন জামিন নিয়ে সাতক্ষীরায় ফিরে এসে বাদী ও তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দেয় ইসমাইল। এছাড়া সে হাতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাদী ও তার বাবা মার বাড়ির সামনে ঘুরে ফিরে আস্ফালন করছে। বর্তমানে আতংকে দিন কাটছে ওই পরিবারটির।
এদিকে, মেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে ১০৭/১১৭ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন সামলার বাবা রফিকুল ইসলাম। যা বিচারাধীন।
অপর দিকে, আসামি ইসমাইল তার প্রেমিকা আয়সা খাতুনকে দিয়ে গত ২৪ জুন আদালতে চুরি ছিনতাই ও মারপিটের অভিযোগে মিথ্যা সার্টিফিকেট দিয়ে একটি মামলা দায়ের করান সালমা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।
এ মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রথম স্ত্রী সালমার দুই ভাই মঞ্জুরুল ইসলাম ও আশরাফুল ইসলাম এবং মাতা মর্জিনা খাতুনকে। সালমার মা মর্জিয়ারা গণমাধ্যমকে জানান, আসামি মঞ্জুরুল বিজিবি সদস্য হিসেবে রংপুরে কর্মরত আছেন। এছাড়া আশরাফুল নৌবাহিনীর সদস্য হিসেবে ঢাকায় কর্মরত আছেন। তাদের চাকুরির উপর প্রভাব ফেলতে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ মামলায় শহরের একতা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্যাডে ডা. মানষ কুমার কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেটে ভর্তি দেখানে হয়েছে ১৮ জুন ২০১৮ এবং হাসপাতাল থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে ২২ জুন। এখানে জখমী আয়সা খাতুনের বয়স দেখানে হয়েছে ৮০ বছর। আর মামলার আর্জিতে আয়সার বয়স দেখানো হয়েছে ৩০ বছর।
অভিযোগ রয়েছে, জেএমবি হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকা মোনতাজ সরদারের মেয়ে আয়সার আপন ভাই আবু মুছাকে এই মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে জেএমবির সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
ওই পরিবারটিকে জেএমবির সাথে সংশ্লিষ্টার বিষয়ে স্থানীয় পৌর কমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন কালু বলেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
এদিকে আয়েসার পক্ষে সার্টিফিকেট প্রদানকারী ডা. মানষ কুমার মন্ডল জানান, উক্ত সার্টিফিকেটে যে স্বাক্ষর ও সিল ব্যবহার করা হয়েছে তাতে আমার নাম থাকলেও আসলে আমি জানি না। এটি নকল স্বাক্ষর দাবি করে তিনি বলেন, এই চক্রটির বিরুদ্ধে আমি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।