বাহলুল করিম: টক-মিষ্টি ও ঝাঁঝালো স্বাদের ফল আনারস। কেটে লবণ দিয়ে কাঁচা চিবিয়ে বা জুস বানিয়ে খেতে পছন্দ করেন অনেকে। আনারস খুবই পুষ্টিকর বিধায় অনেকে সালাদ হিসেবেও খান। দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায়, চোখ ভাল রাখতে, হাড় গঠনে, ওজন নিয়ন্ত্রণে, হজম শক্তি বাড়াতে আনারসের জুড়ি নেই। এছাড়া দেহে রক্ত চলাচল স্বাবাভিক রাখতে ও পুষ্টির অভাব পূরণে আনারস ওষুধের মতো কাজ করে। তবে, গর্ভবতী নারীদের জন্য আনারস খাওয়া নিষেধ।
আনারসের আদি জন্মস্থান দক্ষিণ আমেরিকায়। সাধারণত বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে আনারস চাষ হয়। আনারস এক প্রকারের গুচ্ছফল। এর পাতা বা ডাল কাটাযুক্ত। অনেকগুলো পাতা একসাথে গুচ্ছ অবস্থায় থাকে। আর এই পাতার উপর আনারস আস্তে আস্তে বড় হয়ে ওঠে। আনারস কাঁচা অবস্থায় সবুজ রঙের হয়ে থাকে। কিন্তু পাকলে হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
আনারসের ত্বক অমসৃণ প্রকৃতির। এর ত্বক অসংখ্য গোলাকৃতির খ-ে বিভক্ত। এর খোসা বেশ পুরু। খোসা ছাড়ালে রসালো শাস পাওয়া যায়। খোসা ছাড়ানোর পর আনারসের গায়ে অসংখ্য গর্ত দেখা যায়।
সাতক্ষীরা অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ আনারস লবণ দিয়ে মাখিয়ে কাঁচা চিবিয়ে খায়। অনেকে আবার সালাদ ও জুস তৈরি করেও খায়। প্রচুর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ আনারস খেতে যেমন সুস্বাদু ও মিষ্টি তেমনি এতে রয়েছে নানবিধ ওষুধি গুণাগুণও।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলার মৃগীডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মো. মজিবর রহমান বলেন, “আনারস ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব পূরণ করে। এছাড়া পরিমিত পরিমাণে আনারস নিয়মিত খেলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে যায়। আনারস নানা ধরণের পুষ্টির অভাব দূর করে থাকে।”
শহরের কাটিয়া সরকার পাড়ার বাসিন্দা রুবি খাতুন বলেন, “আনরসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “সি”, ক্যালসিয়াস ও ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে। যা আমাদের শরীরের হাড় গঠনে সাহায্য করে থাকে। এছাড়া আনারস খেলে হজম শক্তি বাড়ে ও হাড়ের ক্ষয় রোধ হয়।”
এ ব্যাপারে শহরের পুষ্টির ফেরিওয়ালা রুহুল কুদ্দুস বলেন, “আনারস খুবই পুষ্টিকর একটি ফল। আনারস সাধারণত সবাই লবণ দিয়ে মাখিয়ে কাঁচা চিবিয়ে খায়। আবার অনেকে সালাদ বা জুস বানিয়েও খায়। আনারস নিয়মিত খেলে দাঁত ও মাড়ি ভালো থাকে। এছাড়া আনারস খেলে চোখ ভালো থাকে। শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। ফলে হৃদপি-ও ভালো থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “তবে যাদের এ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে ও গর্ভবতী মায়েদের আনারস খাওয়া উচিত নয়। এছাড়া যাদের ডায়াবেটিস ও বাতের সমস্যা রয়েছে তাদের আনারস খাওয়া ঠিক নয়।”
মুক্ত কোষ উইকিপিডিয়ার মতে, ‘আনারস একপ্রকারের গুচ্ছফল। আনারসের বৈজ্ঞানিক নাম Ananas comosus (L.) Merr| এর অন্যান্য নাম-¨ bvg-Pineapple, Anannas, Ananus, Bahunetraphalam, Anamnasam| এর আদি জন্মস্থল দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে। তবে বর্তমানে ক্রান্তীয় অঞ্চলে বিশ্বের সর্বত্রই এর চাষের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে।
আনারস পুষ্টির বেশ বড় একটি উৎস। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এসব উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
শুনতে অবাক লাগলেও আনারস আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ আনারসে প্রচুর ফাইবার এবং অনেক কম ফ্যাট রয়েছে। সকালে আনারস বা সালাদ হিসেবে এর ব্যবহার অথবা আনারসের জুস অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর।
আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ। ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে করে তোলে মজবুত। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় পরিমিত পরিমাণ আনারস রাখলে হাড়ের সমস্যাজনিত যে কোনও রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
আনারসের ক্যালসিয়াম দাঁতের সুরক্ষায় কাজ করে। মাড়ির যে কোনো সমস্যা সমাধান করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন আনারস খেলে দাঁতে জীবাণুর আক্রমণ কম হয় এবং দাঁত ঠিক থাকে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, আনারস ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে। এ রোগটি আমাদের চোখের রেটিনা নষ্ট করে দেয় এবং আমরা ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাই। আনারসে রয়েছে বেটা ক্যারোটিন। প্রতিদিন আনারস খেলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এতে সুস্থ থাকে আমাদের চোখ।
আনারস আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ কার্যকরী। আনারসে রয়েছে ব্রোমেলিন, যা আমাদের হজমশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। বদহজম বা হজমজনিত যে কোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন আনারস খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এই ফল। ফলে শিরা-ধমনির (রক্তবাহী নালি) দেয়ালে রক্ত না জমার জন্য সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত যেতে পারে। হৃদপি- আমাদের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। আনারস রক্ত পরিষ্কার করে হৃদপি-কে কাজ করতে সাহায্য করে।’
দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায় আনারস, গর্ভবতী নারীদের জন্য না
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/