Site icon suprovatsatkhira.com

টানাপোড়নে টিকে থাকার বিষয়টিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ

জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন। সাতক্ষীরা শহরের কাছারীপাড়ায় জন্মসূত্রে তার বসবাস। শহরের সিলভার জুবলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সাতক্ষীরা কলেজ ও আযমখান কমার্স কলেজে পড়াশোনা করেছেন। প্রথমজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত তিনি। বর্তমানে সাতক্ষীরা টাউন স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। ছিলেন সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতিও। ‘সমসাময়িক রাজনীতি ও জাতীয় পার্টি’ বিষয়ে কথা বলেছেন সুপ্রভাত সাতক্ষীরার সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আরিফুল ইসলাম রোহিত ও এসএম নাহিদ হাসান-

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: কেমন আছেন?
আজহার হোসেন: কেমন আছি কথাটা তো আর এক কথায় বলা সম্ভব না। তবে সব মিলিয়ে ভালো আছি।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার জন্মস্থান ও পরিবার-পরিজন সম্পর্কে জানতে চাই-
আজহার হোসেন: আমার জন্ম ১৯৫৫ সালের ১২ অক্টোবর শহরের কাছারীপাড়ায় (রেজিস্ট্রি অফিসের পাশে), পৈত্রিক ভিটায়। তখন অবশ্য আধাপাকা ঘরবাড়ি ছিল। পরে আমি তিনতলা বাড়ি করেছি। ছোট থেকেই আমি এখানে বড় হয়েছি। আমরা পাঁচ ভাই ও চার বোন। আমি ভাইদের মধ্যে মেঝো। আমার বাবার নাম মৃত শেখ আমজাদ হোসেন। মায়ের নাম মৃত মোছা. আমানু খাতুন। আমার সহধর্মিনী শেখ রেহানা হোসেন। আমার দুই ছেলে। বড়টা শেখ ফেরদাউস হোসেন কল্লোল- কানাডায় লেখাপড়া করছে। ছোটটা শেখ তানভীর হোসেন পল্লব আইইউবি’তে বিবিএ শেষ বর্ষে পড়ছে। আমার বাবা পেশায় ছিলেন সরকারি চাকুরীজীবী।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: বাল্যকালে কেমন ছিলেন-
আজহার হোসেন: তখন ছোটকালে এই এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছি। শহরের স্থানীয় ছেলে ছিলাম। তবে একটি ঘটনা আমার স্মৃতি হিসেবে আছে। সময়টি ১৯৭১ সাল। সে সময় আমি ক্লাস টেনের ছাত্র। মন্টু ডাক্তার নামে আমার এক বন্ধু ছিল। তখন আমার বাড়ির সামনে এসডিও এর পুকুর ছিল। ওই পুকুরের কোনায় একদিন বিকেলে বসে আছি। তো হঠাৎ আমাকে আর মন্টুকে পাকিস্তানি পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। অনেক দেনদরবার করে পরে আমাদের মুক্তি মিলেছিল। এটাই আমার বড় স্মৃতি।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন-
আজহার হোসেন: প্রাথমিক শিক্ষা শুরু ১৯৬২ কি ৬৩ সালে। সিলভার জুবলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি শেষ করি। মাধ্যমিকে ভর্তি হই পিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৭১ আর ৭২ সাল মিলিয়ে এসএসসি পাশ করি। আর কলেজ জীবন শুরু করি সাতক্ষীরা কলেজে। তখন এই কলেজ সরকারি ছিল না।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার পেশাগত জীবন-
আজহার হোসেন: প্রথম জীবনে ঠিকাদারী পেশার সাথে যুক্ত ছিলাম। ভোমরা পোর্ট নির্মাণের উদ্যোক্তাদের মধ্যে আমি একজন। সেখানে ব্যবহারকারী অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ছিলাম। সেই কারণেই আমি আমদানি নির্ভর কিছু কাজের সাথে যুক্ত ছিলাম। তবে বর্তমানে পৈত্রিক আর কিছু জমি লীজ নিয়ে ধুলিহরে একটি মাছের ঘের করেছি। বর্তমানে এটাই আয়ের উৎস।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: রাজনীতিতে প্রবেশ করলেন কীভাবে-
আজহার হোসেন: যখন আমি পিএন স্কুলের ছাত্র তখন ৬৯ সালের গণআন্দোলন শুরু হয়। সেসময় ছাত্রদের নিয়ে মিছিলে যেতাম। ক্লাস টেনের ছাত্র হিসেবে তখন এক কথায় স্কুলের মাতব্বর। ক্লাস বন্ধ রাখতে হবে এবং মিছিল করতে হবে- এটাই শুধু বুঝতাম। কেন হরতাল করতে হবে, কেন মিছিল করতে হবে তা জানতাম না। কারণ তখন তো যোগাযোগ ব্যবস্থা এত বেশি ছিল না। আমরা শুধু জানতে পারতাম ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্ররা মারা গেছে। আর তাতেই ঘোষণা দিতাম ক্লাস হবে না। আর এটা বলে ঘণ্টা পিটিয়ে দিতাম। তখন পিএন স্কুল থেকে মিছিল নিয়ে কলেজের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে মিছিল করতাম। তখন আসলে সাতক্ষীরা কলেজের সাথে মিছিল না করলে মিছিল জমতো না। আর এভাবেই ক্রমান্বয়ে রাজনীতিতে আসা।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: তারপর-
আজহার হোসেন: ৬৯ সালের গণআন্দোলন আর ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ আমাকে রাজনীতিতে টেনে এনেছে। চাকরি করবো এই মানসিকতা কখনো ছিল না। যে কারণে সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গন এবং পরবর্তীতে রাজনীতিতে আসা।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: রাজনীতিতে আসার ক্ষেত্রে কে প্রেরণা দিয়েছিল?
আজহার হোসেন: যখন আমি কলেজে পড়ি তখন আমি ছাত্র ইউনিয়নের সাথে জড়িয়ে পড়ি। কেন জানি না, তখন মওলানা ভাসানীর প্রতি একটু শ্রদ্ধাবোধ বেশি ছিল। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাথেও সম্পৃক্ত হই। এরপর কাজী জাফরের বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলাম। তবে এক কথায় কাজী জাফরের হাত ধরেই আমার রাজনীতিতে আগমন। আমার অনুপ্রেরণা ও অনুকরণ কাজী জাফর। উনি একটি সময় খুলনায় অবস্থান করতেন। আর আমাদের ডেকে নিয়ে রাজনীতির আলোচনা করতেন।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: জাতীয় রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কম নয়, আবার জাতীয় পার্টি নিজ ভ‚মিকার কারণে কখনো আলোচিত, কখনো সমালোচিত হয়েছে- এটাকে কীভাবে দেখেন?
আজহার হোসেন: আমার বিবেচনা দিয়ে বলবো- জাতীয় পার্টি একমাত্র দেশপ্রেমিক দল। ১৯৮২ সালে আব্দুস সাত্তার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ছিলেন। উনি তখন রাষ্ট্রপরিচালনায় অপারগতা প্রকাশ করে সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী সেনাপ্রধানের হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। দেশে যাতে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা না হয় সে জন্য সাত্তার সাহেব সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার পরে বিভিন্ন পট পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এরশাদ সাহেব ৯০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকেন।
তবে একটি কথা না বললেই নয়- এই দেশে যত উন্নয়ন সবকিছুর সূত্র তৈরি করেছেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এরশাদ। ৮২ সাল থেকে ৯০ সাল পর্যন্ত ৯ বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি।
এরপর নির্বাচন দেওয়া হয়। সেখানে বিএনপি নির্বাচিত হয়। এরপরে আবার ২০০১ সালে নির্বাচনে এরশাদ সাহেব আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিলেন। দেশে যতবার সরকার গঠনের সময় সমর্থন প্রয়োজন হয়েছে, ততবার এরশাদ সাহেব আওয়ামী লীগকে সমর্থন প্রদান করে সরকার গঠন করিয়েছেন। জেলের মধ্যে থেকেও এরশাদ সাহেব আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছেন। পরে মহাজোট গঠন হলো। এরশাদ সাহেব তখনও আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের পক্ষে এরশাদ সাহেব নির্বাচন করলেন। সে সময় মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলো। সেখানে আমরা সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদীয় আসন ধরে রেখেছিলাম। জাতীয় পার্টি একটি শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ দল। এই দল দেশে যাতে অরাজকতা না হয়, ক্ষমতার কাড়াকাড়ি না হয় এবং এই কাজটি করতে গিয়েই মূলত জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীসহ সকলের কাছেই সমালোচিত হয়েছে। এটা সমালোচনার জায়গায় গেলেও বাস্তবতার বিচারে আমরা ঠিক কাজই করেছি।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থান সম্পর্কে কিছু বলুন-
আজহার হোসেন: যেহেতু ২০০৮ সালে আমাদের সংসদ সদস্য ছিল। প্রত্যেক উপজেলায় আমাদের কমিটি আছে। ২৮ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকেও দলের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা একটি আলাদা বিষয়। আসলে কর্মীরা চায় যে, আমাদের দল ক্ষমতায় থাকবে। আলাদা মর্যাদা থাকবে। কিন্তু কিছু টানাপোড়নের কারণে টিকে থাকার বিষয়টিই সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারপরেও সংসদে আমাদের ৩৫টির মত আসন আছে। আমাদের মন্ত্রী আছে। সব মিলিয়ে জেলায় জাতীয় পার্টিকে যে আমরা ধরে রাখতে পেরেছি- এটাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সম্প্রতি সাতক্ষীরায় জাতীয় পার্টিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দিয়েছে- এটা নিরসনে দল কোন ব্যবস্থা নিয়েছে কী না-
আজহার হোসেন: অভ্যন্তরীণ কোন্দল আছে বলা ঠিক না। কারণ নীতি বা আদর্শের জায়গায় কোন দ্বন্দ্ব নেই। আগামী নির্বাচন আসন্ন। দলের শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে। এখন অনেকে দল থেকে মনোনয়ন নিতে চাইছে। সাতক্ষীরায় অবস্থান করেন না, কেন্দ্রে থাকেন বিধায় কেন্দ্রীয় নেতাদের একটু পরশ পেয়ে থাকেন। যে কারণে নির্বাচনে আগ্রহী তারা। কিন্তু আমরা এটাকে দ্বিমত পোষণ করেছি। এই একটা দ্বিমত থেকে আমাদের নিজেদের মধ্যে একটু মতবিরোধ আছে। কিন্তু দলের মাঝে চলার পথে কোন বিভাজন নেই। যেহেতু আদর্শের কোন বিভাজন নেই সেহেতু এটা ঠিক হয়ে যাবে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে বর্তমান জেলা কমিটি কতটুকু ভূমিকা রাখতে পেরেছে বলে মনে করেন-
আজহার হোসেন: একটা জিনিস বলে রাখা ভালো যে, কোন জিনিস নিজে উৎপাদন করে ভোগ করতে না পারলে মনোকষ্ট একটু থাকেই। ঠিক তেমনি ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে কাজ করতে না পারলে আসল কাজ হয় না। একটা দল যখন ক্ষমতায় থেকে জনগণের কথা সংসদের মাধ্যমে বলে, উন্নয়নে অংশীদার হয় তখন আরেক দল যারা ক্ষমতায় থাকে না তাদের কর্মীরা সেই জায়গা খোঁজে যেখানে গেলে সাময়িক উপশম হয়। সে জন্যে শক্তি বৃদ্ধিতে আমরা ক্ষমতায় থাকা দলের চেয়ে একটু পিছিয়ে আছি।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধিতে সাতক্ষীরায় জাতীয় পার্টি কী কী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে?
আজহার হোসেন: না। আমাদের সাথে কারও কোন শত্রুতা হয়নি। কারো সাথে কোন বৈরিতাও নেই। দল নিয়ে কারো সাথে কোন মনোমালিন্য হয়নি। এজন্যে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: জাতীয় পার্টির সরকারে থাকা নিয়ে নানা কথা হয়, এটাকে কীভাবে দেখেন-
আজহার হোসেন: জাতীয় পার্টি সরকারি দল না বিরোধী দল এটা বলতে গেলে বলতে হয়, আমাদের দেশ বা পার্শবর্তী দেশে বিরোধী দল বলতে গেলে বোঝায় এমন দল যে কী না সংসদে সমালোচনা করবে, উন্নয়নকে ব্যাহত করবে। কিন্তু আমরা তো সরকারকে সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় এনেছি। আমাদের লক্ষ্য তো সরকারকে আগামী পাঁচ বছর চালিয়ে নেওয়া। যেটি অন্যায় সেটাকে অন্যায় বলেছি। যা ভালো তাকে ভালো বলেছি। সম্প্রতি কোটা আন্দোলনকারীদের উপর হামলার প্রতিবাদ করেছি। শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্যে পাশে দাড়িয়েছি। সংসদকে অকার্যকর করা আমাদের লক্ষ্য নয়। আমাদের লক্ষ্য শান্তি আনা। তবুও আমরা সরকারের সাথে থেকেও পজেটিভ ভাবে সমালোচনা করতে পারছি।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার রাজনৈতিক জীবনে কী কী বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন? বাঁধাগুলো কীভাবে মোকাবেলা করেছেন?
আজহার হোসেন: একটা ব্যাপার কি- সাতক্ষীরা একটি ছোট শহর। বসবাসও পৌরসভায়। গুটিকয়েক মানুষই সর্বত্র প্রতিনিধিত্ব করে। সরকারি দলের কিছু কিছু কর্মী আমাকে তাদের দলে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু আদর্শ ছেড়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। এই ধরণের কিছু কিছু বাঁধা জীবনে এসেছে। তা মোকাবেলা করেই টিকে ছিলাম।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আগামীতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জেলা জাতীয় পার্টি নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে?
আজহারে হোসেন: আসলে দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কয়েক মাস আগে আমরা সম্ভাব্য প্রতিবেদন তৈরি করে সাতক্ষীরার ৪টি আসনের প্রার্থীদের নামের তালিকা পাঠিয়েছি। আমার নামও তার মধ্যে আছে। বিশেষ করে আমি সর্বশেষ এই পৌরসভা নির্বাচন করেছি। যদিও আমি অল্প ভোটে হেরেছিলাম। কিন্তু আমি তা মানতে পারিনি।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে কী ভাবছেন-
আজহার হোসেন: সম্প্রতি আমি নির্বাচন করে উঠলাম বলে আমার কাছে নির্বাচনের মাঠ প্রস্তুত আছে। সদর আসনের এলাকাগুলোতে জাতীয় পার্টির সমর্থনও বেশ রয়েছে। আবার আমার সভাপতির পদের সময়সীমাও শেষ হয়ে আসছে। সেজন্যে আমি চাই আরেকবার যদি সুযোগ পাই তবে এই এলাকার মানুষের সেবা করবো।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলের নীতি নির্ধারকদের প্রতি আপনার কোন পরামর্শ আছে-
আজহার হোসেন: নির্বাচন কমিশনেরই একটা সার্কুলার আছে যে, তৃণমূল থেকে প্রার্থী দিতে হবে। আর এজন্যেই কিন্তু আমাদের কাছে তালিকা চাওয়া হয়েছিল। তবু আমরা যাই করি না কেন নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে গেলে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে একটু প্রিয়ভাজন হতে হয়। তা না হলে একটু কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। আমরা এখনো কোন নির্দেশনা পাইনি। এজন্য আমরা কোন সিদ্ধান্ত নেইনি। কিন্তু শুধুমাত্র সদর আসনের ব্যাপারে বলবো এখানাকার মানুষ কিন্তু জাতীয় পার্টিকেই চায়।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার উন্নয়ন নিয়ে কী ভাবেন-
আজহার হোসেন: প্রকৃতপক্ষে সাতক্ষীরা কিন্তু একটি উৎপাদনমুখী জেলা। চিংড়ি ক্ষেত্রে আগে থেকেই আমাদের রপ্তানি ব্যবস্থা ছিল। বর্তমানে আম যাচ্ছে। যত বেশি রপ্তানি হবে ততই দেশের মঙ্গল। এক কথায় আমদানি মোটে না হলেই ভালো হয়। তবে রপ্তানি হতে হবে বেশি। এরশাদ সাহেব একটা ফর্মুলা দিয়েছিলেন- প্রাদেশিক পরিষদ গঠন। আর এটা যদি করা যেত তবে আমাদের রাজধানীর মুখোমুখি হতে হতো না। নিজেদের টাকা দিয়েই নিজেরা উন্নয়ন করতে পারতাম।
বর্তমানে সাতক্ষীরার বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। যে কোন উপায়েই এই সমস্যাকে মুক্ত করতে হবে। নইলে খুব শীঘ্রই এই এলাকা জলাবদ্ধ শহরে পরিণত হয়ে পড়বে। এ কারণেই জলাবদ্ধতামুক্ত সাতক্ষীরা দেখতে চাই। এছাড়া বর্তমানে যাতায়াত সমস্যা রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন দরকার। একই সাথে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। ধন্যবাদ জানাই প্রাক্তন মন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হককে, যিনি একটি মেডিকেল কলেজ ও একটি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল তৈরি করে দিয়েছেন। আর এটা সাতক্ষীরার চিত্র বেশ পাল্টে দিয়েছে। তবে, এখন মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময়।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: জেলার পর্যটন খাতকে নিয়ে কী ভাবেন-
আজহার হোসেন: পর্যটন খাতকে সম্প্রসারিত করার আগে নিজেদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো করতে হবে। আর তারপরে ধাপে ধাপে সংস্কার করতে হবে। পর্যটকরা দুটি জিনিস চায় এক হলো নিরাপত্তা দুই হলো আবাসন ব্যবস্থা। এর দিকে নজর দিতে হবে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: অবসর সময়ে কী করতে ভালবাসেন?
আজহার হোসেন: অবসর কাটানোর জন্যে আমি একটা ঘর করে রেখেছি। সেখানে আমি নিয়মিত বসি। বন্ধুরা মিলে আলাপ আলোচনা করি। গল্প-গুজব করি। এছাড়া আরও মানুষ আসে। সকলেই আনন্দ উল্লাস করি।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে সফলতার মূলমন্ত্র কী বলে মনে করেন?
আজহার হোসেন: একজন রাজনীতিবিদ শুধুই না একজন মানুষ হিসেবে সফল হতে গেলে প্রথমে তাকে ভদ্র আচরণের অধিকারী হতে হবে। সৎ জীবন-যাপন করতে হবে। আচার-আচরণ ভালো হলে নিজেকে প্রসারিত করা সহজ হয়।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার পছন্দের ব্যক্তিত্ব কে?
আজহার হোসেন: হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: রাজনৈতিক জীবনে আপনি সবচেয়ে বেশি কাছে পেয়েছেন কাকে?
আজহার হোসেন: আমার স্ত্রীকে। আসলে পরিবার থেকে সহযোগিতা না পেলে কিন্তু রাজনীতি করা সহজ না।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: জাতীয় পার্টির কর্মীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন-
আজহার হোসেন: জাতীয় পার্টির কর্মীরা ভদ্র, নম্র। কর্মীদেরকে আরও সচেতন হতে হবে। ২৮ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পরেও আমাদের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছে। সবাইকে দলের জন্য নিরলস কাজ করতে হবে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনাকে ধন্যবাদ।
আজহার হোসেন: সুপ্রভাত সাতক্ষীরাকেও ধন্যবাদ।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version