বাহলুল করিম: ডেবু গ্রামীণ একটি অপ্রচলিত ফল। টক-মিষ্টি সুস্বাদু এই ফল কেউবা খায় ভর্তা করে, কেউবা খায় চাটনি বানিয়ে। ডেবু আবার রান্না করেও খাওয়া যায়। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ও মুখের রুচি বাড়াতে ডেবু কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া গ্যাসট্রিক সমস্যা দূরে, শরীরের মেদ কমাতে, কোলনকে পরিষ্কার রাখতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ডেবু ওষুধের মতো কাজ করে। ডেবুর দানা শিশুদের প্রিয় খাবার।
গ্রাম-গঞ্জে, আগান-বাগানে ডেবু গাছ দেখতে পাওয়া যায়। ডেবু গাছ উচ্চতায় প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়ে থাকে। এটি ক্রান্তীয় চিরসবুজ প্রকৃতির এক ধরণের বৃক্ষ। এর পতা বড়, সরল, একান্তর ও বৃন্তযুক্ত। ডেবু আকৃতিতে গোলাকার হয় না। এর ত্বক অমসৃণ প্রকৃতির হয়।
ডেবু ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ বর্ণের হয়। ফল পাকলে হলুদ, কমলা, কমলা-লাল বা লালচে-কালো বর্ণ ধারণ করে। ফলের ভেতরের অংশ অনেকটা কাঁঠালের মতো। কাঁঠালের ভেতরে যেমন কোষ থাকে ঠিক তেমনি ডেবুরও কোষ থাকে। এই কোষগুলো খেতে খুব মজা।
কোষের মধ্যে দানা বা বীজ থাকে। বীজ দেখতে সাদা রঙের হয়। বীজগুলো দেখতে অনকেটা চীনা বাদামের মতো। এই বীজ ভেজে বা পুড়িয়েও খাওয়া যায়। ডেবু কাঁচা অবস্থায় প্রচুর টক স্বাদের হয়ে থাকে। একারণে অনেকে ডেবু ভর্তা বা চাটনি করে খেয়ে থাকেন। ডেবু ফল রান্না করেও খাওয়া যায়। পাকা ডেবু টক-মিষ্টি বা মিষ্ট স্বাদযুক্ত হয়।
সাতক্ষীরা সদরের বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে, পোস্ট অফিস মোড়ে, থানা মসজিদের সামনেসহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় ডেবু কিনতে পাওয়া যায়। শহরের বিভিন্ন স্থানে ডেবু বিক্রি করতে দেখা যায়।
সাতক্ষীরা অঞ্চলের মানুষের কাছে এটি ডেউ, ডেবু, ডেওয়া বা ডেওফল নামে পরিচিত। অন্যান্য জেলায় এটি আবার ডেউ, ডেবু, ডেওয়া, ডেউয়া চাম বা বন কাঁঠাল নামেও পরিচিত। ডেবুর সংস্কৃত নাম লকুচ।
ডেবু যে সুস্বাদু শুধু তাই নয় এর রয়েছে অনেক ভেষজ গুণাগুণ। ডেবুকে ভিটামিন ‘সি’ ও ক্যালসিয়ামের আধার বলা হয়। এছাড়াও ভিটামিন ‘এ’, লৌহ, খনিজ, ক্যারোটিন ইত্যাদি পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ এই ডেবু ফল। ডেবু ছোট-বড় সবার মুখের রুচি বাড়াতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। গ্রামের বাচ্চারা এই ফলটিকে খুব পছন্দ করে।
ডেবুর উপকারিতা সম্পর্র্কে পাইকগাছা উপজেলার শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের ভেষজ চিকিৎসক মো. আফায উদ্দীন বলেন, “ডেউয়া শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে সহায়তা করে। এক থেকে দেড় চামচ পরিমাণ ডেউয়ার রস ঠা-া পানিতে মিশিয়ে রোজ একবার করে খেলে অতিরিক্ত মেদ থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া সম্ভব।”
এ ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, “ডেবু প্রচুর আঁশযুক্ত খাবার হওয়ায় আমাদের কোলনকে পরিষ্কার রাখে। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।”
ব্রহ্মরাজপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. কফিল উদ্দীন বলেন, “ডেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। গ্যাসট্রিকের রোগীদের জন্য খুব ভালো উপকারী ফল এটি। ডেবু স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সক্ষম।”
উদ্ভিদ ও প্রাণি জ্ঞানকোষের তথ্য মতে, ‘ডেবুর বৈজ্ঞানিক নাম অহঃড়পধৎঢ়ঁং ষধশড়ড়পযধ। এটি গড়ৎধপবধব পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এর ইংরেজি নাম গড়হশু ঔধপশ। ডেবু উদ্ভিদের ফুল ও ফল ধারণ হয় এপ্রিল-জুন মাসে। এটি বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। ডেবু উদ্ভিদের কা-ের বাঁকল ফিতা কৃমি নাশক। বাঁকলের ক্বাথ মুখের ব্রণ, ত্বক ফাঁটা ও ক্ষত সারাতে ব্যবহৃত হয়। ডেবু উদ্ভিদের শিকড় থেকে এক প্রকার হলুদ রঙ নিষ্কাশন করা হয়। কোন কোন স্থানে ডেবুর বাঁকল পানের সাথে চিবিয়ে খাওয়া হয়।’
সবমিলিয়ে প্রচুর পুষ্টিকর ও ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ হওয়ায় ডেবু পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়াতে সক্ষম। এই উদ্ভিদটি সংরক্ষণে আমাদের আরও সচেতন হওয়া উচিত। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ডেবু
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/