আশিকুর রহমান, নওয়াবেকী (শ্যামনগর): শ্যামনগর উপজেলার ১০নং আটুলিয়া ইউনিয়নের ৪০নং আটুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার কাঁচা রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দাবি উঠলেও এখনো রাস্তাটি পাকাকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। চলতি বর্ষা মৌসুমে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। হালকা বর্ষা হলেই রাস্তায় হাটু কাদা হয়। এতে পাঁচ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে পেরিয়ে যায় ঘণ্টা।
আটুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শুভাষ চক্রবর্তী বলেন, বিদ্যালয়ের শত শত ছাত্র-ছাত্রীকে হাটু কাদা ঠেলে স্কুলে আসতে হয়, অনেক সময় দেখা যায় ছাত্রছাত্রীরা এক ক্লাস পরে এসে হাজির হয়। শুধু তাই নয় বর্ষার মৌসুম আসলেই ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি অনেক কমে যায়।
পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র সবুজ হোসেন জানায়, বর্ষার সময় আমরা টিফিনে বাড়ি খেতে যেতে পারি না। বাড়ি যেতেই টিফিনের সময় ফুরিয়ে যায়।
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র বেলাল জানায়, কাদা ঠেলে স্কুলে আসতে দেরি হলে স্যাররা বকাবকি করে। বর্ষায় শুধু কাদা হয় না রাস্তায় বড় বড় গর্তও হয়। সেখানে পানি জমে থাকে। অনেক সময় পড়ে গিয়ে বই খাতা, কাপড় চোপড় ভিজে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুধু মাত্র স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা নয়, যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে চরের বিল, ডালিপাড়া, বৈরাগী পাড়া, বদ্দি বাড়ি, খান্দার বাড়ি, মিস্ত্রি বাড়ি ছাড়াও কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। দিনমজুরেরা সকালে হালকা বর্ষা হলে কাজে যেতে পারে না, এতে হতদরিদ্র পরিবারগুলো হুমকির মুখে পড়ছে। স্থানীয়দের বাজার করতে চুনার ব্রিজ যেতে হয় দুই কিলোমিটারেরও অধিক পথ ঘুরে। চুনারব্রিজ থেকে এক কিলোমিটার রাস্তায় ইটের সোলিং থাকলেও তারপরে রাস্তা একটি ইটও নেই।
স্থানীয় সাত্তার মোড়ল জানান, পেটের তাগিদে বিভিন্ন সময় কাজের জন্য এগ্রামে ওগ্রামে যেতে হয়। কিন্তু বৃষ্টি হলে কাজে বেরোনো সম্ভব হয় না, আর বাজার ঘাট করতে যেতে হয় চুনার ব্রিজে নয়তো হাওয়াল ভাংগী। রাস্তাটি পাকা করলে এতো দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
৫নং ওয়ার্ড গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মো. ইসরাফিল হোসেন বলেন, হঠাৎ দুদিন থেকে চারদিন বর্ষা হলেই হাটু সমান কাঁদায় আমাদের চলাচল করতে হয়, হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে কাদার কারণে কোন প্রকার যানবাহন চলাচল না করায় ঠিক মতো চিকিৎসা দেওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। অসুস্থ রোগীকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নৌকা যোগে চুনা নদী পার হয়ে তারপর সদরে চিকিৎসার জন্য যেতে হয়। বর্ষা মৌসুম আসলে যেন জনজীবনে দুর্ভোগের শেষ থাকে না।
তপন কয়াল নামে এক মুদি ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিদিন দোকান খোলার জন্য তিন কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে চুনার ব্রিজে আসতে হয়, যেদিন বৃষ্টি হয়, সেদিন দোকান খুলতে হয় দেরিতে।
এ বিষয়ে আটুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু সালেহ বাবু বলেন, ৪০নং স্কুল ও আশপাশের গ্রামগুলোয় জন্মলগ্ন থেকে আমি কাদা দেখে আসছি। ৩৫ বছর আগে আমি ওই স্কুলের ছাত্র ছিলাম, ৩৫ বছর পরেও রাস্তার অবস্থা একই। বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই রাস্তাটি ইটো সোলিং করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ সময় তিনি রাস্তা নির্মাণে সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এসএম জগলুল হায়দারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
আটুলিয়ায় কাঁচা রাস্তায় ভোগান্তি, পাকাকরণের দাবিতে এমপির দৃষ্টি আকর্ষণ
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/