সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম। প্রথম জীবনে শিক্ষাকতা করতেন, পরে ব্যবসা। ১৯৭০ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের কমনরুম সম্পাদক ছিলেন। বাবার হাত ধরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে হাতে খড়ি। ১৯৮৪ সালে ছিলেন আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের ট্রেজারার। ১৯৯৫ সালে জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পান। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সাতক্ষীরা সদর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। ১৯৯৭ সালে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে নির্বাচিত হন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। ২০১৫ সালেও পুনরায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। সর্বশেষ জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ‘ব্যক্তিগত জীবন, সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আওয়ামী লীগ’ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন সুপ্রভাত সাতক্ষীরার সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এসএম নাহিদ হাসান ও আসাদুল ইসলাম
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: কেমন আছেন?
মো. নজরুল ইসলাম: ইনশাল্লাহ ভাল আছি। সুপ্রভাত সাতক্ষীরাকে শুভেচ্ছা।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার জন্মস্থান, পরিবার পরিজন সম্পর্কে জানতে চাই-
মো. নজরুল ইসলাম: আমার আদি বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নে। যা আগে ছিলো আশাশুনির ভিতরে, এখন সদর উপজেলায়। বর্তমানে সুলতানপুরে আছি। ১৯৫৩ সালের ১৭ নভেম্বর ফিংড়িতেই আমার জন্ম।
বাবা আব্দুল জব্বার সরদার ও মা রিজিয়া খাতুন মারা গেছেন। আমরা তিন ভাই। আমার মেঝ ভাই কলারোয়া বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি মারা গেছেন। ছোট ভাই ফিংড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে শিমুলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
আমার দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ে মাস্টার্স করেছে, গৃহিনী। বড় জামাই জেলা জজ কুমিল্লাতে কর্মরত আছে। আমার ছোট মেয়ে খুলনায় অনার্স মাস্টার্স করেছে, সে খুলনা রোটারি স্কুলের শিক্ষক। ছোট জামাই জ্যেষ্ঠ নির্বাহী প্রকৌশলী, কেডিএতে চাকরি করে। আমার ছেলেটা ছোট, সে এমবিবিএস ডাক্তার। এখন ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছে। পাশাপাশি অর্থোপেডিক্সে এমএস করছে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার শিক্ষা জীবন-
মো. নজরুল ইসলাম: উত্তর ফিংড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমার লেখাপড়া শুরু। পি.এন হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাশ করি। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ডিগ্রি পাশ করি।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার পেশাগত জীবন সম্পর্কে জানতে চাই?
মো. নজরুল ইসলাম: লেখাপড়া করার পর অনেক দিন শিক্ষকতা করেছি। প্রথম ১৯৭৪ সালে গাভা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে চাকরি জীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে শিমুলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তালার সরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনেক দিন শিক্ষকতা করেছিলাম।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: পরে-
মো. নজরুল ইসলাম: শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করি। চিংড়ি চাষ, বাজারজাতকণসহ ছোটখাটো ব্যবসা করতাম।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: রাজনীতিতে হাতে খড়ি কীভাবে?
মো. নজরুল ইসলাম: বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। তার কাছ থেকে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিষয়ে বুঝতাম। পরবর্তীতে আমাকে রাজনীতিতে সহযোগিতা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের সাহেব, সৈয়দ কামাল বখত সাকি সাহেবরা।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনি তো ছাত্র রাজনীতি করতেন?
মো. নজরুল ইসলাম: ১৯৭০ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের কমনরুম সম্পাদক ছিলাম।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনি যখন ছাত্র রাজনীতি করতেন তখনের রাজনীতি কেমন ছিলো এবং বর্তমানে কেমন মনে হয়?
মো. নজরুল ইসলাম: বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি প্রাচীন ছাত্রসংগঠন। ছাত্রলীগের রাজনীতি বর্ণাঢ্য রাজনীতি। তখনকার ছাত্রলীগ আর এখনকার ছাত্রলীগে অনেক তফাৎ দেখা যায়। আশা করি বর্তমান ছাত্রলীগ নতুন ধারায় আসবে। আপনারা দেখছেন ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়েছে- কিন্তু কমিটি দেওয়া হয়নি। কমিটি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার বিশ্লেষণ করেই কমিটি দেওয়া হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কমিটির বিষয়টি দেখছেন। আমরা চাই ছাত্রলীগ তার হারানো গৌরব ফিরে পাক।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার রাজনৈতিকজীবন সম্পর্কে কিছু বলুন-
মো. নজরুল ইসলাম: ১৯৮৪ সালে আমি আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের ট্রেজারার ছিলাম। তারপর সাতক্ষীরা আসি। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলাম। তারপর ১৯৯৫ সালে জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ হই। ১৯৯৬ সালে সদর নির্বাচনী এলাকা থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করি। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হই। ২০০১ সালে আবারো নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করি। ২০০৪ সালের সম্মেলনে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পুনরায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। বর্তমানে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছি।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এই পদে থেকে রাজনীতি কেমন উপভোগ করছেন?
মো. নজরুল ইসলাম: রাজনৈতিকভাবে সাধারণ সম্পাদক খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ। সেই হিসেবে আমি গত মেয়াদে প্রায় ১১ বছর একটানা সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। তখন সভাপতি ছিলেন ইঞ্জিনিয়র মজিবুর রহমান। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সকল আন্দোলন, সংগ্রাম, নির্বাচন করেছি। এখনো ভাল যাচ্ছে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: অবসরে কোন স্মৃতিটি মনে পড়ে?
মো. নজরুল ইসলাম: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যার পর থেকে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে নানা অপপ্রচার চালিয়ে দীর্ঘদিন রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে প্রত্যার্বন করেন এবং ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আমিও ৯৬’তে প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু পাশ করতে পারিনি। তবে মনটা সে দিন আনন্দে ভরে গিয়েছিলো। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এটা ভাবলে মনটা ভবে যায়।
অনেক সুখ-দুঃখের মধ্যদিয়ে রাজনীতি করেছি। অনেক টানাপড়েন ছিলো। ২০১৩ সালে গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছি। রাষ্ট্র ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকার পরও জামায়াত-বিএনপি এক হয়ে সাতক্ষীরাতে যে তাণ্ডব চালায়, সেই সহিংসতায় আমাদের ১৬জন নেতা-কর্মী প্রাণ হারায়। তখন আমরা শহরে থেকেও যেন নিরাপত্তাহীনতায় ছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিলাম।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়কে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা চলেছিল, জেলা আওয়ামী লীগ তা কতটা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছিলো?
মো. নজরুল ইসলাম: প্রাথমিকভাবে আমরা ততটা অনুধাবন করতে পারেনি যে, ওরা একটা নির্বাচিত সরকারের অধীনে ওতটা সহিংসতা করতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে মোকাবেলা করেছিলাম। তারা সাতক্ষীরাতে সংঘবদ্ধভাবে আর কিছু করতে পারেনি। পরে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তা গুপ্তহত্যা হয়েছিলো। সেখানে আমাদের সংগঠন গতিশীল ছিলো এবং সরকার নীতি পরিবর্তন করে কঠোর হলে এগুলো কমে গিয়েছিলো। খালেদার দীর্ঘ দিনের অবরোধের সময় দেখেছেন সারা দেশে কিভাবে সহিংসতা চালিয়েছিলো, গাড়িতে পেট্রলবোমা মেরে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছিলো। কিন্তু আমাদের সাতক্ষীরাতে একটা ঢিলও পড়েনি। বর্তমানে এখন সাতক্ষীরা শান্ত।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: দীর্ঘ নয় বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হিসেবে দলকে কতটুকু শক্তিশালী করতে পেরেছেন?
মো. নজরুল ইসলাম: আওয়ামী লীগ আগের চেয়ে অনেক সবল। বিশেষ করে এখানে জামায়াত-বিএনপির রাজনীতি এখন হুমকির মুখে। জামায়াতের বড় বড় নেতারা যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত হয়েছে। অনেক রায় কার্যকর হয়েছে। বিএনপির কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে প্রেসব্রিফিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এতে বিএনপির তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীরা হতাশ। এদিকে সহিংসতার সাথে জড়িত না এমন অনেক বিএনপি কর্মী আমাদের আশপাশে ঘোরে, যাতে আমাদের দলে ঢুকতে পারে। কিন্তু আমারা তাদের আশ্রয় দেই না। আমাদের হাইকমান্ডও এটা নিয়ে সতর্ক করেছে।
আওয়ামী লীগের এই নয় বছরে দেশ অনেক এগিয়েছে। বাংলার মানুষ বুঝে গেছে শেখ হাসিনার হাতেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব। যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, খাদ্য তথ্যপ্রযুক্তিসহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ অনেক উপকৃত হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়ানো হয়েছে। অনেক মানুষ এখন বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা পাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী বেড়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভিজিডি, ভিজিএফ, সন্তান সম্ভাবা মায়েদের ভাতা, দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় শেল্টার হোম তৈরি করে দিচ্ছে। এসব কারণে আমরা মনে করি আওয়ামী লীগ সাতক্ষীরার সব কয়টি আসনে জয় লাভ করবে। তবে এক্ষেত্রে প্রার্থী নির্বাচন একটি বিষয়। অনেকে রাজনীতিতে দক্ষ, অনেকে মাঠ পর্যায়ে ভাল সংগঠক- তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু ভোটের রাজনীতি একটু ভিন্ন- সাধারণ মানুষের সাথে ওঠাবসা, তাদের চাহিদা পূরণ, তাদের মুখের ভাষা বোঝার মত নেতাকে মনোনয়ন দিলে আশা করি আমরা জয়লাভ করবো।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: নানা কারণে বিভিন্ন সময় সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। শুধু জেলা পর্যায়েই নয়, এই কোন্দল প্রতিটি উপজেলা, এমনকি তৃণমূলে ছড়িয়ে পড়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে এর পড়বে কী না?
মো. নজরুল ইসলাম: আসলে আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। সঙ্গত কারণে একটি পদে একাধিক নেতা-কর্মী এবং একটি পদে যাওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন একাধিক নেতা আছে। সেটি দলের পদ অথবা বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, এমনকি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মত একাধিক নেতা আছে। সঙ্গত কারণে বড় দল হওয়ায় কিছু যে বিভেদ নেই- সেটা বলবো না। তবে সেটি নিয়ন্ত্রণে আছে। দুই একটি উপজেলায় একটু সমস্যা আছে। সেটা নিরসনে শুধু স্থানীয়ভাবে না, আমাদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মহাদয়সহ আমাদের খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এখন সেটা অনেকখানি প্রশমিত হয়েছে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: এই কোন্দল সাধারণ নেতা-কর্মীদের উপর প্রভাব ফেলছে কিনা?
মো. নজরুল ইসলাম: একেবারেই ফেলেনি তা নয়। কোন্দলটা তো মূলত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের। কিন্তু তাদের প্রভাবে তৃণমূলেও কিছু কিছু প্রভাব পড়েছে। তবে এবিষয়ে আমরা অনেকখানি ওভারকাম করতে সক্ষম হয়েছি।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: জেলা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এই কোন্দল নিরসনে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?
মো. নজরুল ইসলাম: আমরা তো বহুবার- বিশেষ করে আমাদের রুহুল হক সাহেব, মুনসুর আহম্মদ সাহেব এবং আমি প্রত্যেক উপজেলার নেতাদের সাথে বসে ছোটখাটো যেকোন সমস্যা সমাধান করেছি। কেন্দ্রও এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: তারপরও কোন্দল থেকে গেছে- এটা আসলে কীভাবে সমাধানযোগ্য?
মো. নজরুল ইসলাম: কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের কারণে অনেকখানি সমাধান হয়ে গেছে। আমি মনে করি আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজস্ব বলয় তৈরি করার চেষ্টা চলছে। অনেকে দলীয় নমিনেশন নেওয়ার জন্য গ্রুপিং তৈরি করছে। তবে নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করা হলে- এসব কোন্দল আর থাকবে না। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনবে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: কোন্দল নিরসনে কেন্দ্রের কোন নির্দেশনা আছে কী না?
মো. নজরুল ইসলাম: নির্দেশনা আছে। আমরা যে অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ কী ভাবছে?
মো. নজরুল ইসলাম: সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ এখন অনেক সুসংগঠিত। সেক্ষেত্রে চারটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দিলে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। এটা সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এখানে অন্য দলের, সহযোগীর প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা অনুপ্রবেশ করেছে শোনা যায়, যদি এমন হয়ে থাকে- এটা নিরসনে কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন কী না?
মো. নজরুল ইসলাম: এটা শোনা যায়। আমরাও শুনেছি। তবে এর কোন দালিলিক প্রমাণ পায়নি। আর আমাদের নির্দেশনা আছে বিএনপি-জামায়াতের কেউ আমাদের দলের টিকিট পাবে না। বর্তমানে আমাদের সদস্য নবায়ন চলছে। এখানে এটাও বলা আছে, দলে যদি ভুলবশত কারো নাম আসে- তবে, পরবর্তীতে করবে তার সদস্য পদ আর নবায়ন হবে না।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন কমিটিতে কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?
মো. নজরুল ইসলাম: এটা নিয়ে আমরাও মর্মাহত। আমরাও লক্ষ করেছি, অনেকে সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার প্রার্থী হিসেবে ঢাকা থেকে প্রচারণা চালান। কিন্তু কখনো তাদের আওয়ামী লীগের রাতনীতিতে বা জনগণের সাথে সম্পৃক্ত হতে দেখা যায় নি। জনগণের কল্যাণের জন্য তাদের কোন কর্মকাণ্ড আমরা কেন সারা সাতক্ষীরার মানুষ দেখেনি। এখন তারা সংসদ সদস্য হয়ে মানুষের খেদমত করবে? এভাবে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আমি বিশ্বাস করি এবার আমাদের দলের যে কৌশল, তাতে এসব মানুষ নমিনেশন পাবে না।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: দলীয় সদস্য নবায়ন চলছে- এখন কী অবস্থা?
মো. নজরুল ইসলাম: সদস্য নবায়নে সকল ইউনিট তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাধারাণ সম্পাদক হিসেবে সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মো. নজরুল ইসলাম: জেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো এখানে বেশ সক্রিয় ও শক্তিশালী। নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো কিছু বিরোধ আছে। সেটি নিরসনে শুধু স্থানীয়ভাবে নয়, কেন্দ্রীয়ভাবেও বার বার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। আশা রাখি এটির সমাধান হয়ে যাবে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে কোন পরামর্শ আছে কিনা?
মো. নজরুল ইসলাম: নতুনদের জন্য দলে জায়গা করে দিতে হবে। আমাদের সাংগঠনিক নেতৃত্বে একটি ব্যালেন্স আনা হবে। নবীন ও প্রবীণ মিলিয়ে একটি শক্তিশালী ইউনিট করার প্রক্রিয়া চলছে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: উপজেলায় উপজেলায় নেতাদের সাথে কর্মীদের দূরত্ব দেখা যায়। এই দূরত্ব কমানো উচিত বলে মনে করেন কী না?
মো. নজরুল ইসলাম: অবশ্যই এটা বন্ধ করতে হবে। নেতাকে অবশ্যই অবশ্যই কর্মী বান্ধব হতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আওয়ামী লীগ সরকার একটি উন্নয়নমুখী সরকার- সরকারের উন্নয়ন মানুষের কাছে তুলে ধরতে জেলা আওয়ামী লীগ কী ধরনের ভ‚মিকা রাখছে-
মো. নজরুল ইসলাম: আওয়ামী লীগের কেন্দ্রের একটি সেল আছে। এখানে পত্রপত্রিকার মাধ্যমে এবং সেলের মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টার, লিফলেট, বুকলেট সাধারণ মানুষে মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া কিছু উন্নয়ন আছে যা প্রচার করার দরকার হয় না। এগুলো দৃশ্যমান। যেমন বিদ্যুৎ খাত, যোগাযোগ খাত, স্বাস্থ্য খাতে যে উন্নয়ন তা মানুষ অবশ্যই মনে রাখবে। পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান হয়েছে। এটা তো প্রচার করার কিছু নেই। তবে কিছু মানুষ আছে যারা সব সময় এ সরকারের উন্নয়ন না দেখে খারাপ দিকগুলো তুলে ধরেন। যেমন এখন মাদক বিরোধী অভিযান চলছে। এটা নিয়েও ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু লাভ হবে না। মাদক আমাদের দেশকে ধ্বংস করছে। তাই এ অভিযান অব্যাহত থাকুক। জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ উন্নয়নের বিষয়গুলো প্রচার করছে এবং জনসভা, পথসভা, উঠান বৈঠকের মাধ্যমে জনগণকে অবহিত করা হচ্ছে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: ভবিষ্যতে নিজেকে কোন অবস্থানে রেখে জনগণকে সেবা দিতে চান?
মো. নজরুল ইসলাম: হা হা হা। আসলে আমার সুযোগ হয়েছিলো। আমি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত। ওইসময় জননেত্রীর নজরে এসেছিলাম। ১৯৯৬ সালে একপ্রকার ডেকে নিয়ে আমাকে নির্বাচনে দাড় করিয়ে দিয়েছিলেন। এ জন্য আমি নেত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। দলের সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছিলো। কিন্তু ছয় হাজার ভোটে হেরে গিয়েছিলাম। পরে আবারো আমাকে সুযোগ করে দিয়েছিলেন, কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, তখনও হেরে যায়। আসলে তখন এ এলাকাটি জামায়াত অধ্যুষিত ছিলো। তবে, এখনো আমি প্রত্যাশী। দল বা মাননীয় নেত্রী যদি সেই সুযোগ করে দেন তাহলে সকলকে সাথে নিয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবো।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: অবসর সময়ে আপনি কি করেন?
মো. নজরুল ইসলাম: অবসর তেমন পাই না। নিজের সংসার নির্বাহের জন্য নিজের ছোটখাটো ব্যবসা দেখি। আর পরিবারকে সময় দেই।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মো. নজরুল ইসলাম: আপনাদেরও ধন্যবাদ।