Site icon suprovatsatkhira.com

সাতক্ষীরার সংস্কৃতি অঙ্গন: প্রান্তিকতায় প্রতিদিন

খায়রুল বাসার
ধরা যায় পাঁচ হাজার বছরের পুরণো এই সাগরঘেঁষা বদ্বীপের বয়স। তা থেকে অনুমান করা যায় সভ্যতা ও সংস্কৃতির বয়সও প্রায় তার কাছাকাছি। আমরা এখানে বিগত পাঁচ হাজার বছরের ক্রমাগত গড়ে ওঠা সভ্যতার ইতিহাস বর্ণনা করতে পারবো না, তবে বর্তমানকে জানতে কিছুটা হলেও অতীতের পটভূমি ব্যবহার করতে হবে। পেছনের সব কিছুই যে স্বর্ণালী, হিরণ¥য় হয়ে মানসপটে ঝিলিক দেবে তা তো নয়, ক্রমান্বয়ে গড়ে ওঠা নিয়মে অনেক কদাকার ইতিহাসের পথ মাড়ানোও অস্বীকার করা যাবে না! অনতিদূর-অতীতে যে সাংস্কৃতিক চারণভূমিতে ফসল ফলাতে একদা হাল বাইতাম, সেখানে বর্তমানের নিকটে আসতে এই পরিক্রমাটুকু প্রয়োজন পড়বেই! কিছু কিছু পদরেখা, যা অনুসরণ না করলেই নয়, আগুপিছু করতে করতে বর্তমান যাপিত জীবনে এসে পৌঁছুতে পারবো আশা করি।
আপাতত এতদঞ্চলের যে সকল চলমান সংস্কৃতিধারা বিশ^সভ্যতার সাথে সংযুক্ত হয়ে চলেছে তা-ই আমাদের সংস্কৃতি বলে পরিচয় দেওয়া উচিত। কিন্তু সমুদ্রকুল-ঘেঁষা এই বদ্বীপাঞ্চলের নিজস্ব কিছু পৃথক লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস আছে, যা আমাদের স্বকীয়তার আত্মগরিমায় ভরপুর। তাই সামান্য হলেও অতীত থেকে আমাদের বর্তমানকে খুঁড়ে তোলার প্রয়াস।
আধুনিক সভ্যতায় আমাদের অঞ্চলের পূর্বপুরুষদের পরিচয় উদ্ঘাটন করেছেন যাঁরা, তাঁরা যে যে নামে ডেকেছেন, তা হলো- গোয়ালা, কৈবর্ত, পোঁদ, বাগদী, বাউরি, চÐাল, মালো, মালী, মুচি, রাজবংশী, সদগোপ, বুনা, বাঁশফোঁড়, কেওড়া, যুগী, সাঁওতাল, নমঃশুদ্র, ভূমিজ, বেদে, তেলি, সুবর্ণবণিক, গন্ধবণিক, ময়রা, কলু, তন্তুবায়, মাহিষ্য, তামলি, নাপিত, রজক, কোল, ভীল, মুÐা, শবর, সাঁওতাল, চÐাল, পৌÐ্রু ইত্যাদি। একটি সয়ং-সম্পূর্ণ গ্রাম-ব্যবস্থায় মানুষ যখন বেঁচে থাকার প্রয়োজনে একতাবদ্ধ, তখন এই সকল কর্মবিভাজনে একে-অন্যের সহায়ক শক্তি হিসেবে ইতিহাসের চাকা সচল রেখেছিলো। এখান থেকেই ক্রমান্বয়ে ভবিষ্যতের দিকে আমাদের যাত্রারম্ভ।
মানবসভ্যতার ইতিহাস শ্রম-শোষণ আর অধিকার-সংগ্রামের ইতিহাস; এই বদ্বীপবাসী ক্রমান্বয়ে মানুষ হয়ে উঠার ইতিহাসও নানা বৈষম্য, বঞ্চনা, লুটেরার আক্রমণ, শ^াপদসংকুল অরণ্য-বনানী আর অনুকূলবিহীন ভূ-প্রকৃতির সাথে নিয়ত যুদ্ধ করে বেড়ে ওঠার। সম্পদ লুণ্ঠনের জন্য বহিরাগত মানুষের আগমনের আগেও মানচিত্রের এই প্রান্তসীমার মানুষেরা জীবন ধারণের বিভিন্ন প্রণালী, চারু-কারু কাজ, আহরণ ও উৎপাদনের বিভিন্ন হাতিয়ার ইত্যাদি জন্ম দিতে পেরেছিলো। প্রাকৃতিক নিয়মেই মানুষের মধ্যে নারী-পুরুষ, ¯েœহ-ভালবাসা, পিতা-পুত্র, মাতা-কন্যা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। প্রাগৈতিহাসিক আমল থেকেই যৌথভাবে বাঁচার উপায় হিসেবে পরিবার, গোষ্ঠি, একই সাথে কর্মবিভাজনও গড়ে উঠেছিলো। বিপদ-বিষম্বাদে একে অন্যের সহযোগী হতে শিখেছিলো। প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়ে, জয়-পরাজয়ের ধারণা থেকে অহম, কর্মস্পৃহা, যুথবদ্ধ হবার তাগিদ অনুভব করেছিলো। হীনতা, নীচুতা এবং কর্তৃত্ববাদী ধারণারও জন্ম তখন থেকেই। প্রাথমিক পর্যায়ে শ্রেণীগত বৈষম্যের বশবর্তী হয়ে অসততা, ভোগস্পৃহা, বিলাসিতা, অলসতা ইত্যাদি নেতিবাচক কর্মকাÐের সাথেও পরিচয় ঘটেছিলো এবং মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই দুই ভাগে ভাগ হয়ে মানুষ ও অমানুষে পর্যবেশিত হয়েছিলো; যার দায়ভার বর্তমানেও কোন কোন মানবগোষ্ঠি কাঁধ থেকে নামা তে পারেনি। এতদঞ্চলের মানুষও না।
পৃথিবীর মানচিত্রের এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে এভাবেই আভ্যন্তরীণ শোষক, সুযোগসন্ধানী, দখলদার, লুটেরা দস্যু প্রভৃতিদের সাথে মুখোমুখি হতে হয়েছে বহুবার; কখনো জিতেছে, কখনো হেরেছে। হারজিতের ঘোরপ্যাঁচে প্রাকৃতিক সম্পদ, ভূ-সম্পদ, মানবসম্পদ হারিয়েছে; বহিরাগতদের বশ্যতা স্বীকার করে তাদের ধ্যান-ধারণা, ভাষা, দৈনন্দিন আচার-আচরণ ইত্যাদি গ্রহণ করেছে। এই মিথস্ক্রিয়ায় সাধারণ আঞ্চলিক জনগোষ্ঠি থেকে শুরু করে বর্তমানে বিশ^মানবিকতার মিছিলে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পেরেছে।
যাপিত জীবনের সংগ্রাম-সফলতা-ব্যর্থতা থেকে ক্রমান্বয়ে আজকের পর্যায়ে আসতে এই অঞ্চলের মানুষকে শত শত যুদ্ধ-সংগ্রামের পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। আক্রমণকারী আর দখলবাজদের সাথে ক্রমশই যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়েছে। সেই বাস্তবতায়, অন্ততঃ একটা কথা বলা যায়- নিজস্ব কোন সাংস্কৃতিক প্রকৃতি তার গড়ে ওঠেনি। দখলদার গোষ্ঠির আচার-আচরণ, ব্যবহার, ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, রুচি, পোশাক মিশ্রিত হয়ে আছে জীবনযাত্রায়। পৃথক কোন বৈশিষ্ট্যের জন্ম দেবার অবকাশ তাকে দেয়নি। বহিরাগত ধ্যান-ধারণাই আমাদের সমাজ জীবনের পাথেয় হয়ে আছে। বলতে কি, আজ সভ্যতার যুগেও অনেকটা এককোষি প্রাণীর মতো একচক্ষু বুদ্ধিমানেরা এখানের বাজার দখল করেছে। এই বাজারের ধারণাও বিজয়ীদের।
সয়ং-সম্পূর্ণ গ্রাম-ব্যবস্থা থেকে আমাদের, অর্থাৎ এই অঞ্চলের মানুষদের বাজারে-মানুষ বানিয়ে ছেড়েছে। আমরা সকলেই বাজারের পণ্যে পরিণত হয়ে গেছি। ঠিক একইভাবে পণ্যের দরে বেঁচতে হয়েছে জীবনের সুকুমারবৃত্তিকেও। হাট-বাজার-ঘাট-বন্দর-উপকূল এলাকার মানুষের দৈনন্দিন জীবন বাঁধা থাকে ভাসমান বিত্তবান, ভাসমান স্বাস্থ্যবান, ভাসমান কীর্তিবান মানুষের ভাসমান ক্রিয়াকাÐের অভিপ্রায়ের সাথে। বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল আর নদী বিধৌত, সমুদ্র উপকূলীয় এই বদ্বীপের মানুষের সংস্কৃতি’র গঠন সেভাবেই বর্ধিত।
যে অঞ্চলের মানবগোষ্ঠির শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনার অবকাশ এখানে, তা মানচিত্রের প্রান্তসীমায় অবস্থিত হওয়ায় মূল ভূখÐের নানা বেনোজলের আবর্জনা আমাদের কূল প্লাবিত করেছে। সংস্কৃতিক্ষেত্রে একশ্রেণীর পরজীবী পানার মতো ভাসমান থাকতে হয়েছে ইতিহাসের প্রায় সবটুকু সময়।
গাঙ্গেয় বদ্বীপের অন্যান্য স্থানের মতো আমাদের শিল্প-সাহিত্য-নৃত্য-গীত কোন স্বকীয়তা বহন করে না। অন্ততঃ বর্তমান কালে তেমন কোন পরিচয় সামনে উপস্থাপন করা যাবে না। যেমন ধরা যায় খুলনা অঞ্চলে বালা, অষ্টোক; লাউডোবে সাতপাল; ময়মনসিংহে কিসসা; রংপুরে ঢোপ, হোলি, ভাওয়াইয়া; বরিশাল-ফরিদপুরে বিচার, বিয়ের গান; পটুয়াখালীতে রয়ানী, ভাসান; রাজশাহী-চাঁপাইয়ে গম্ভীরা; যশোর-মনিরামপুর-নড়াইলে বিচ্ছেদ; নেত্রকোণায় পালাগান; নীলফামারীতে পালটিয়া; বগুড়ায় আলকাফ, মনসামঙ্গল, কীর্তন; কুষ্টিয়ায় বেনেপুতুল বিভিন্ন নৃত্য-গীতের কথা উল্লেখ করা গেলেও আমাদের জনপদ সাতক্ষীরার বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে কোন আঙ্গিকের নাম খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। লালনগীতি কোন লোকজ আঙ্গিক না হলেও, রবীন্দ্র-সঙ্গীতের মতো এরও চর্চা অনুশীলনের দাবীদার। এখানে তা নেই। জারীগান এক সময়ে প্রচলিত থাকলেও সর্বগ্রাসী আধুনিকায়ন সেটিও গ্রাস করে ফেলেছে। মানিক পীরের গান লোকজ সংস্কৃতির খাতায় আছে, কিন্তু শহুরে চর্চায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ দেবহাটায় মানিক পীরের থানের অস্তিত্ব বর্তমান। লোকশ্রæতি, সাহিত্য এবং জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বনবিবি নিয়ে পূজা-অর্চনা চালু থাকলেও, বনবিবি’র উপাখ্যান নিয়ে নাট্য-গীত চর্চা, এমন কি দেবহাটায় অবস্থিত বনবিবি’র বটবৃক্ষের আশ-পাশও নেই। সাতক্ষীরায় আধুনিক সংস্কৃতিচর্চার আক্রমণে দেশজ সংস্কৃতির শেকড়ের মাটি একবারেই আলগা।
কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করলে বেরিয়ে আসবে এখানের মানুষ শাসিত হয়ে থাকা অভ্যস্থতার প্রবণতা। নিজেরা গড়ে ওঠার অবকাশ পায়নি। বহিরাগত জাত-পাত-ধর্ম-বর্ণ এ অঞ্চলের প্রাচীন যুথবদ্ধ সয়ং-সম্পূর্ণ গ্রাম-ব্যবস্থা ভেঙ্গে দিয়েছে। ঐ যে, প্রান্তসীমা, ঐটেই বড় কারণ। আমাদের মস্তিষ্ক অবরূদ্ধ হয়ে আছে, প্রসারিত হবার বন্দবস্ত ও সুযোগ ক্ষীণ।
বর্তমান সংস্কৃতিধারা পর্যালোচনা করলে বলতে হয়- শাসন-সততা নির্ভর করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর। সাতক্ষীরার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃহৎ, কিন্তু তা জনসংখ্যার ভিত্তিতে মাথাপিছু গড় হিসেবে নয়। লোকসংখ্যার পাঁচ শতাংশ কেবল বৃহৎ পুঁজির মালিক, বাকিরা কামলা, নিন্মবিত্ত, ভাসমান, খুব কিঞ্চিত পরিমাণে অর্ধশিক্ষিত। ঐ পাঁচ শতাংশই পৃষ্ঠপোষকতা করে শিক্ষা-দীক্ষা, সঙ্গীত, সাহিত্য, নৃত্য, ইতিহাস, সভা-সমিতি-মাহফিল, খবরের কাগজ, মাইক্রোফোন ইত্যাদি।
শিল্প-সংস্কৃতি-আনন্দ-উচ্ছ¡লতার ধরন-ধারণ পাল্টেছে বর্ণপ্রথা বৃদ্ধির ফলে। এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়- সমগ্র দেশের কথা বাদ দিয়ে শুধু আঞ্চলিকভাবে এতদঞ্চলের সংস্কৃতি প্রবাহ আলোচনা নিছক বাহুল্য। তবে বর্তমান যাই-ই হোক, এই অঞ্চলের কিছু গর্ব করার মতো বিষয় আমরা এই সুযোগে উল্লেখ করতে পারি; এবং তা অনেকটা রাজনৈতিক-সংস্কৃতি। যেমন, প্রায় দেড় হাজার বছর আগে থেকেই নির্দিষ্টভাবে রাজনৈতিক-সংস্কৃতির পালাবদলের বীর্যময় কাহিনী স্মরণযোগ্য। বাংলায় পাল বংশের রাজত্বকালে বরেন্দ্রভূমিতে দিব্বোকের নেতৃত্বে কৈবর্ত বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিলো, প্রায় তিরিশ বৎসর কাল কৈবর্তরাজা ‘দিব্বোক বরেন্দ্রিসূযর্’- রাজ্য পরিচালনা করেছিলেন; ঠিক সমসাময়িক কালে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় ধান্দিয়ার মানিঘরের সন্তান ‘তিয়র’ বাগদী-কামার-কুমোর-তাঁতী-চাষী নানাবিধ অন্তজঃশ্রেণী সমন্বয়ে গঙ্গারিডির শাসক চন্দ্রকেতুর সা¤্রাজ্যাধীন বাগড়ী রাজ্য থেকে বুড়নকে মুক্ত করে কৈবর্তশ্রেণীর রাজ্য গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এখনো ধানদিয়ার মানিঘরে তিয়র রাজার নানাবিধ কীর্তি বিদ্যমান; যেমন দীঘি, ঢিবে ইত্যাদি।

সেন বংশের পতনের পর সুলতানী শাসনামলে খানজাহান আলীর শিষ্য চাঁদ খাঁ মসন্দরী, বুড়া খাঁ, দাউদ খাঁ, রাজা বসন্তরায় ক্রমান্বয়ে এতদঞ্চলের শাসনকাল পরিচালনা করেছিলো। তখনকার কাহিনি পরবর্তীকালে ঐতিহাসিকগণ ছাড়াও কাব্য-সাহিত্যে কবি কৃষ্ণরাম দাস, কবি রূদ্রদেবের লেখনিতে ‘রায়মঙ্গল’ কাব্যে এবং আব্দুর রহিম, খোদা বকশ প্রমুখের লেখনিতে ‘গাজী-কালু চম্পাবতী’ পুঁথিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। মুনশী মোহাম্মদ খাতেরের ‘বোনবিবি জোহুরানামা ও নারায়ণী জংগ’ প্রভৃতি লেখনিতে অত্যাচারী রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ-জয়ের কথা পুঁথি আকারে বলা হয়েছে। যেমন বাইশ কবির ‘পদ্মাপুরাণ’-এ বাংলার বিদ্রোহী বীর-চরিত্র ‘চাঁদ সওদাগর’-এর গল্প নিয়ে আধুনিক সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি সাতক্ষীরা অঞ্চলের এই সকল পৌরাণিক বীরেদের কথা কোন আধুনিক কবি-সাহিত্যিক আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি, দায়টা স্থানীয়দের ঘাড়ে বর্তায় যদিও, সে ক্ষেত্রে আমরা কোন কাজই দেখিনি বললেই চলে। তাতে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি ক্ষেত্রে প্রভূত ক্ষতি হয়েছে, বর্তমানের মানুষ, আমাদের স্মরণীয় ঐতিহ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
বনবিবি এবং মানিক পীরের বটবৃক্ষ ও থান দেবহাটায় এখনো মানুষের কৌতূহল নিবৃত করে চলেছে। যেমন লাবশায় মাইচম্পার দরগা, চম্পাবতীর নামে ঐতিহাসিক কাব্যগ্রন্থ (পুঁথি) আছে। ঐতিহাসিকগণের লেখা আছে, কিন্তু সেই কাব্য চর্চা নেই। পাশাপাশি বাবুলিয়ায় ‘গণরাজার গড়’ কিছুদিন আগেও দৃশ্যমান ছিলো, এখন তা অদৃশ্য হয়ে গেছে। কারা কিভাবে এই সকল পুরাতত্ত¡ হজম করে ফেলছে হিসেবে পাওয়া ভার। ইতিহাসে পাওয়া যায়- রাজা মুকুট রায়ের মেয়ে ‘চম্পাবতী’ ভাই কামদেবের সহযোগিতায় পালিয়ে এসে গণরাজার সহায়তায় বারখান শাহ’র ছেলে গাজী’র সাথে সংসার নির্বাহ করেন! এতসুন্দর প্রেমের উপাখ্যান থাকতেও কোন শিল্প-রসিকের নজর কাড়েনি এইসকল পুঁথি-সাহিত্যে। একই সাথে এ-সব আমাদের ঐশ^র্য এবং পিতার কুপুত্রের মতো সংরক্ষণের দৈন্যতা। অথচ চোখের সামনে সাতক্ষীরার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের লোক-সমাজে এই সকল বীরদের নিয়ে নানাবিধ অনুষ্ঠানাদি পালিত হয়। শহুরে শিল্পসেবকগণ এ ব্যাপারে একেবারেই নিরুৎসাহিত।
সাতক্ষীরার কেড়াগাছি অঞ্চলে মহাপুরুষ কবি যবন হরিদাসের জন্ম। তিনি মুসলমানের ঘরে মানুষ হলেও কৃষ্ণনাম যপ করতেন। সেই অপরাধে তাঁকে রাজরোষে পড়তে হয়। তিনি নিজ বসতভিটা ত্যাগ করে বেনাপোলে বসতি স্থাপন করেন। সেখানেও রাজরোষ তাকে পর্যুদস্ত করে। অবশেষে নদীয়ায় গিয়ে শ্রী চৈতন্যদেবের সাথে যুক্ত হন এবং একসাথে কৃষ্ণকীর্তন যপ করে বাংলায় নবজাগরণ সৃষ্টি করেন। সকল অন্তজঃশ্রেণী মানুষ শ্রী চৈতন্যদেবকে মহাপ্রভু নামে আখ্যায়িত করেন। হরিদাসকে নিয়ে শ্রী চৈতন্য অনেক পদ রচনা করেছেন। সাড়ে পাঁচশত বছর আগে শ্রী চৈতন্যের মহাজাগরণের কালে ঠাকুর যবন হরিদাসের নাম অঙ্গাঙ্গিভাবে মিশে আছে। তিনি সাতক্ষীরারই কৃতিসন্তান।
বসন্তরায় যশোর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জনশ্রæতি আছে তিনি কবি ছিলেন। তবে তার কোন লেখা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে কি না আমার জানা নেই। রাজা প্রতাপাদিত্য আপন চাচা বসন্তরায়ের পরিবারকে সমূলে হত্যা করে রাজ্যভার গ্রহণ করেছিলেন। তিনি এক সময় দিল্লীর শাসনকেও অগ্রাহ্য করে নিজস্ব বিশাল নৌ-বাহিনী গঠন করেছিলেন। তিনি বাংলার বার ভূঁইয়ার অন্যতম।
ব্রিটিশ আমলে কলারোয়ার নীল-বিদ্রোহ, তাঁতী-বিদ্রোহের কথা, নারকেলবেড়িয়ার তীতুমীরের বাঁশের কেল্লা, ফরিদপুরের হাজী শরিয়তউল্লাহর আন্দোলনের প্রভাব এতদঞ্চলের মানুষ আজও অনুভব করেন।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে স্মরণীয় নাম- ক্ষুদিরাম বসুর আত্মীয় ছিলো সাতক্ষীরার বসু পরিবার। পূর্ব-পাকিস্তানে ভাষা আন্দোলনের অব্যবহিত পূর্বে ১৯৪৮ সালে জনগণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজশাহী জেলে খাপড়া ওয়ার্ডে বন্দীদের উপরে যে গুলি চালানো হয়েছিলো, তাতে শহীদ হয়েছিলেন বুধহাটার আনোয়ার।
পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম নেতা মওলানা আকরাম খাঁ-এর আত্মীয়-স্বজন সাতক্ষীরার রসুলপুরের খাঁ বংশের প্রায় সকলেই। পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির সময় যখন সাতক্ষীরা-খুলনা অঞ্চল নিয়ে মামলা হলো, তখন সাতক্ষীরার ডাক্তার মাহাতাব উদ্দিন, মীর ওয়াজেদ আলী (ওয়াজেদ মুহুরি) প্রমুখ নানাবিধ উপায়ে কলকাতায় শেরে বাংলা ফজলুল হককে সহযোগিতা করেন, সে কথা তাঁদের পুত্র ডাক্তার আফতাবুজ্জামান এবং মীর রিয়াসাত আলী রাজার নিকট থেকে জানা যায়। পাকিস্তান আন্দোলনে আরো একজন ব্যাক্তির নাম স্মরণযোগ্য, তিনি হলেন তালার সৈয়দ জালালুদ্দিন হাসেমি। তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক সরকারের স্পিকার ছিলেন।
উল্লেখিত তিনজনের বংশধরদের মধ্য থেকেই পরবর্তীকালে সাতক্ষীরাবাসী তিনজন জননেতা হিসেবে অভিভাবক পেয়েছে; যেমন, সৈয়দ জালালুদ্দিন হাসেমি’র ছেলে সৈয়দ কামাল বখত সাকী জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ডা: মহাতাব উদ্দিনের পুত্র ডা: আফতাবুজ্জামান প্রতিমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য ছিলেন। মীর ওয়াজেদ আলী’র দৌহিত্র মীর মোশতাক আহমেদ রবি বর্তমানে সাতক্ষীরা সদরের সংসদ সদস্য।
বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরার মুক্তিযোদ্ধাগণ আট এবং নয় নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করে সাতক্ষীরাকে শত্রæমুক্ত করেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সাতক্ষীরা জেলা ইউনিট কমান্ডের তালিকা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা সর্বমোট ২০৬৩ জন। সাতক্ষীরা শহরেরই পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানী মিলিটারীর হাতে শহীদ হন, তন্মধ্যে- কাজল, খোকন, সিরাজ, টুটুল, আজমল। যদিও নারাণের বাড়ি কপিলমুনি, তবুও কাজল-খোকনের সাথে একই যুদ্ধে তিনি টাউনশ্রীপুরের যুদ্ধে শহীদ হন।
এই ধারাবাহিক রাজনৈতিক-সংস্কৃতি সাতক্ষীরার অতীব গৌরবদীপ্ত ইতিহাস। সেই তুলনায় শিক্ষা-সংস্কৃতির অগ্রসরমানতা খুবই দুর্বল। বিশেষ করে সংস্কৃতি অঙ্গনের ধারাবাহিকতা দারুণভাবে ব্যাহত হয়েছে বলে পরিলক্ষিত হয়।
উপরে রাজনৈতিক-সংস্কৃতি ও কবি-লেখকগণের নাম যা উল্লেখ করা হয়েছে, তা আমরা পেয়েছি ভারত বিভক্তি- এমন কি ব্রিটিশ শাসনেরও আগে। সে সকল ঐতিহ্য পাকিস্তান আমলে আমাদের স্মরণ করতে দেয়া হয়নি। পাকিস্তান আমলে নতুন এক উদ্ভট জগাখিচুড়ি সংস্কৃতিচর্চা আমাদের না করেছে বাঙালি, না করেছে পাকিস্তানি। ইতোমধ্যে নানা বর্ণ-গোত্র-ধর্ম-আশরাফ-আতরাফ নানাবিধ বিভেদ সমাজে আসন গেঁড়ে নিয়েছে। এই খÐিত এবং শ্রেণীবিভেদের সংস্কৃতি চর্চা পরবর্তীতে আমাদের নিত্য পরিচর্যার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
ব্রিটিশ চলে যাবার পর সিকি-শতাব্দির মধ্যেই বাঙালি জাতিসত্তার আবির্ভাব ঘটে। আর রীতিমতো যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এক স্বপ্নবিজয়ের লক্ষ্যে দখলদার বাহিনীকে বাংলার মানুষ প্রতিহত করে। বিজয় ছিনিয়ে নেয়। কিন্তু দিবসের শেষে দেখা যায় আমরা সেই ঐতিহ্যবাহী নিজস্বতাকে পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হই। বিশ^ায়নের ফাঁদে আটকা পড়ে আমরা হারিয়ে ফেলি কালীগঞ্জের চারণ কবি মো: এবায়দুল্লাকে, যিনি ‘ঝরাফুল’ কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছিলেন, ষোলপাতার কবিতা লিখে হাটে হাটে গেয়ে বিক্রি করতেন, তাঁর ‘বেদের মেয়ে জরিনা সুন্দরী’র কথা ভুলে যাই! ময়মনসিংহ-গীতিকার মতোই যথেষ্ট আবেদন নিয়ে এই সকল চারণ কবিরা সাতক্ষীরার হাটে-মাঠে-ঘাটে-বাটে গান শুনিয়ে বেড়াতেন। হারিয়ে ফেলি শত-বছরের পূর্বেকার সাতক্ষীরার সর্বপ্রথম গেজেটেড পত্রিকা ‘মসজেদ’কে। যার প্রকাশক-সম্পাদক ছিলেন গোলাম রহমান।
আনিস সিদ্দিকী, সিকান্দার আবু জাফর, মওলানা আকরাম খান, খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ, এম ওয়াজেদ আলী, আল কালাম আব্দুল ওহাব, মো: তবিবুর রহমান প্রমুখ শিক্ষাবিদ এবং লেখকগণ সাতক্ষীরায় জন্মগ্রহণ করেও অনেকেই লেখালেখি চর্চ্চা করেছেন সাতক্ষীরার বাইরে। কেবলমাত্র ‘মসজেদ’ পত্রিকার ঠিকানা দেখা যায়- পলাশপোল, সাতক্ষীরা।
মোবারক আলী খান, কাজী রোজী, আ শ ম বাবর আলী, কাজী ওয়ালীউল্লাহ, গাজী আজিজুর রহমান, এ কে এম আব্দুর রউফ প্রমুখ সাতক্ষীরার সাহিত্য অঙ্গনে সুদৃঢ় সাক্ষর রেখেছেন।
দেশ-বিভাগোত্তর কালে পাকিস্তান আমল হতে সঙ্গীত নিয়ে সাতক্ষীরায় জন্মগ্রহণ করা অনেকেই জাতীয় পর্যায়ে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছেন যাঁরা, তন্মধ্যে বাঁকালের শেখ লুৎফর রহমান এবং মুকুন্দপুরের ‘ইয়াসমিন’ ভগ্নিগণ বিখ্যাত। শেখ লুৎফর রহমান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক গানের সুরারোপ করেছেন। তিনি গানের কথায় সুরারোপ করে গোপনে স্বাধীন বাংলা বেতারে পাঠাতেন। স্থানীয়ভাবে মো: কওসার আলী গান এবং নাট্যক্ষেত্রে অনেক কাজ করেছেন।
বর্তমানে সাতক্ষীরায় অনেকগুলো দৈনিক পত্রিকা, অনেকগুলো ছোটকাগজ, অনেকগুলো কবিতা-গান-নৃত্য অনুশীলনকেন্দ্র নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে। সাতক্ষীরায় কবির সংখ্যা বেড়েছে বোঝা যায় বিভিন্ন কবিতাবিষয়ক অনুষ্ঠানাদি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে।
‘যাত্রা’ শিল্পে সাতক্ষীরা একসময় যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলো। পূর্ব-পাকিস্তানে সেরা যাত্রাদল হিসেবে ‘আর্য অপেরা’র নাম করা যায়। ‘রঞ্জন অপেরা’ও সাতক্ষীরার অপর একটি যাত্রাপার্টির নাম। যাত্রা-নাটক রচয়িতা হিসেবে ‘সত্যপ্রকাশ দত্ত’ প্রথিতযশা। তাঁর রচিত ‘সাধক তুলশীদাস’ এবং ‘আনারকলি’ বিখ্যাত। পরবর্তীতে তিনি পশ্চিমবঙ্গে গমণ করেন। সেখানেও বহু নাটক রচনা করেছেন এবং রাজ্য-সরকারের পুরস্কার অর্জন করেছেন।
১৯১১ সাল থেকে সাতক্ষীরার জমিদারদের সহযোগিতায় একটি নাট্যশালা গড়ে উঠেছিলো, নাম ‘ফ্রেন্ডস ড্রামেটিক ক্লাব’। এই নাট্যাঙ্গণে তৎকালীন কলকাতা থেকে আগত শিল্পীগণসহ স্থানীয় নাট্যামোদিরা নাট্যচর্চ্চা করতেন। এই ধারাবাহিকতা ৫০/৬০ দশক পর্যন্ত নিয়মিতভাবে পরিচালিত ছিলো।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের মাসেই (২৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল) ‘সাতক্ষীরা মহকুমা সংস্কৃতি সংসদ’ গঠন করেন, যা পরবর্তীতে ‘জেলা সাংস্কৃতিক পরিষদ’ নামে রূপলাভ করে।
মুক্তিযুদ্ধের আগে ষাট দশকে দুইটি সংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তারা ‘শিল্পের জন্য শিল্প নয়, জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য শিল্পকলা’ এই মন্ত্রে উজ্জীবীত ছিল।
বর্তমানে সাতক্ষীরায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নানাবিধ জাতীয় ‘দিবস পালন’কে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি পরিচালিত হতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে শিল্পকলা একাডেমি এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতার কথা স্বরণযোগ্য। তাছাড়া প্রায়শঃই সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলির প্রচেষ্টায় ভারত এবং দেশের রাজধানী থেকে কবি-সাহিত্যিক, শিল্পীদের আমন্ত্রণ করে আনা হয়। এতে বিভিন্ন রকমের নৃত্য-গীত-সাহিত্যালোচনার বিচিত্রময় স্বাদ পায় দর্শক-শ্রোতামÐলী।
সাতক্ষীরার ব্যবসায়ীশ্রেণী যথেষ্ট শিল্পানুরাগি। যতগুলো সাংস্কৃতিক সংস্থা এখানে দৃশ্যমান, প্রায় সবগুলোতে অধিক সংখ্যক সদস্য বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী। যেমন পাবলিক লাইব্রেরি, শিল্পকলা একাডেমি, জেলা সাংস্কৃতিক পরিষদ ইত্যাদি। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থার নীতিনির্ধারণী ভূমিকা পালন করেন অধিকাংশক্ষেত্রে ব্যবসায়ীগণ নতুবা স্থানীয় প্রশাসন।
দেশের অন্যান্য প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং জেলাসমূহ যতখানি শিল্প-সংস্কৃতিতে এগিয়েছে, তুলনামূলক সাতক্ষীরা পিছিয়ে। জাতীয় পর্যায় থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদির লেনদেন কম। যেমন, নাট্যোৎসব অনুষ্ঠিত হয় না, নাটকে যথেষ্ট সমৃদ্ধ ছিলো সাতক্ষীরা, এখন তার চর্চা নেই। বছর বছর বইমেলা করা যায়, সঙ্গীতাৎসব করা যায়। অবশ্যই সে সব কর্মযজ্ঞে বহু-দলের অংশগ্রহণের স্বাধীনতা থাকতে হবে। এ সকল অনুষ্ঠানাদিতে দর্শক সমাগম করতে প্রচার প্রপাগাÐা করতে হবে। উৎসাহিত করতে নানাপ্রকার সম্মাননা প্রদান করতে হবে। কিন্তু এ সব ক’টি বিষয়ই এখানে অনুপোস্থিত। এখানে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান নেই, ¯্রােতধারা রূদ্ধ হয়ে আছে শহরটার খালের মতো। সাতক্ষীরা শহরের খালটার দিকে তাকালেই এখানের সাংস্কৃতিক রুচির পরিচয় অনেকাংশে প্রস্ফুটিত হয়। শিল্প-সঙ্গীতের যা কিছু পরিচর্যা, তার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে পারে!
সংস্কৃতি বিকাশের যে স্বাধীনতা তা অনেকাংশে খর্বাকৃতি হয়ে আছে, এ কথা সত্য। শঙ্খ ঘোষের কবিতার কথায় বলতে হয়- ‘পেটের কাছে উঁচিয়ে আছো ছুরি/ কাজেই এখন স্বাধীন মতো ঘুরি।’ এটা আমাদের সাতক্ষীরা অঞ্চলের মানুষের নিয়তি- প্রান্তিক হবার কারণে। বলা হয় ভারতবর্ষ সভ্যতা শিখেছে ইংরেজের কাছ থেকে। সেই ইংরেজের ভারতবর্ষের রাজধানী ছিলো এক সময় কলকাতা, সাতক্ষীরার একেবারে দোরগোড়ায়। রাজধানীর স্বাদ-গন্ধ নিয়ে বর্ধিত হওয়া শিল্পী-সাহিত্যিক-রাজনীতিক-সাধারণ মানুষ এখন না পারে দূরের কেন্দ্রের সাথে তাল মিলাতে, না পারে প্রান্তিকতা মেনে নিতে; এই দুয়ের সংঘর্ষে এক অবিমিশ্র শিল্প-সাহিত্য চর্চা তাকে মান্য করে চলতে হয়। এই প্রেক্ষিতে সেই শঙ্খ ঘোষের কথা আবারো স্মরণ হয়- তিনি কবিতায় লিখেছেন- ‘দাপিয়ে বেড়াবে আমাদের দল, অন্যে কবে না কথা’ এগুলোও মানতে হয়।
প্রান্তিকতায় শিল্পচর্চার মনোস্তাপে সব শেষে রবীন্দ্রনাথে আশ্রয় নিয়ে শেষ কথা বলতে হয়- ‘শাসনে যতই ঘেরো, আছে বল দুর্বলেরও’। তবে এই দুর্বলের বল যদি শুধু ক্ষেদোক্তিতেই থেকে যায়, কোন ফল পাওয়া যাবে না। আশার কথা হলো- আলো যে প্রান্তেই উদ্ভাসিত হোক, সে চতুর্দিকে আভা ছড়াবেই। তাই প্রান্তিকতাও ভরসা হারায় না!

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version