বাহলুল করিম: বর্ষার একটি সুস্বাদু ফল কাঠবাদাম। শিশুদের খুবই প্রিয় ফল এটি। গ্রামীণ পরিবেশে কাঠবাদামের বহুল প্রচলন রয়েছে। খাওয়ার পাশাপাশি অনেকে এটি খেলনা হিসেবেও ব্যবহার করে। কাঠবাদাম পাকলে এর বাইরের অংশ মিষ্টি স্বাদের হয়। যা গ্রামাঞ্চলের শিশুদের কাছে খুবই প্রিয়। শিশুরা বাইরের অংশ চুষে চুষে খায়।
রাস্তার পাশে, আগান-বাগানে, বাড়ির আঙিনায়, শহরে বা গ্রামীণ পরিবেশে কাঠবাদাম গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এটি বৃহদাকৃতির একধরণের চির সবুজ বৃক্ষ। এর গাছ ৩০-৩৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর শাখা-প্রশাখা অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। এর কা- সাধারণত শক্ত প্রকৃতির হয়। কা- থেকে শাখা-প্রশাখা একটু দূরে অবস্থান করে।
কাঠবাদামের পাতা অন্যান্য গাছের পাতার তুলনায় একটু বড় হয়। এর পাতা দেখতে অনেকটা বট গাছের পাতার মতো। পাতার অগ্রভাগ ইউ আকৃতির। পাতা গাঢ় সবুজ রঙের হয়ে থাকে। পাতার শিরা উপশিরাগুলো বাইরে থেকে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। পাতা তিন-চার ইঞ্চি থেকে পাঁচ-ছয় ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতাগুলো শাখা-প্রশাখার প্রান্তে একসাথে গুচ্ছ অবস্থায় থাকে বলে দেখতে ফুলদানির মতো মনে হয়। শুষ্ক মৌসুমে এর পাতা ঝরে যায়।
কাঠবাদাম দেখতে উপবৃত্তাকার এবং চ্যাপ্টা কিন্তু এর অগ্রভাগ সুচালো। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। কিন্তু ফল পাকলে হালকা হালকা খয়েরি বর্ণ ধারণ করে। কাঠবাদামের খোসা খুব শক্ত প্রকৃতির। কিন্তু এর ভিতরে সাদা রঙের শ্বাস বা বাদাম থাকে। এর শ্বাস কাঁচা বা পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। শ্বাস বা বাদামের অগ্রভাগ সুচালো হয়। কিন্তু খেতে ঠিক চীনাবাদামের মতো।
ফল পাকলে এর বাইরের অংশ মিষ্টি স্বাদের হয়। যা শিশুরা খুবই পছন্দ করে। বিশেষ করে গ্রামীণ পরিবেশে শিশুরা এগুলো নিয়ে খেলা করে থাকে। আবার অনেকে এটি ফাঁটিয়ে বা কেটে এর শ্বাস খায়। তবে শহরের শিশুদের অনেকেই এই ফল সম্পর্কে জানে না। তাই এর স্বাদও তারা নিতে পারে না।
এ ব্যাপারে ব্রহ্মরাজপুর গ্রামের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র রামিন বলে, “কাঠবাদাম আমার খুব প্রিয়। আমি ও আমার বন্ধুরা এটি দিয়ে খেলা করি। ফল পাকলে মিষ্টি লাগে। পাকা কাঠবাদামের রস খেতে খুব ভাল লাগে। আবার এর ভিতরের শ্বাসও খুব ভাল লাগে। আমারা সবাই আনন্দ করে খাই।”
এ ব্যাপারে শহরের পুষ্টির ফেরিওয়ালা রুহুল কুদ্দুস বলেন, “কাঠবাদাম সাধারণত উষ্ণ অঞ্চলের উদ্ভিদ। গাছ অনেক বড় হয়। পাতা গাঢ় সবুজ রঙের হয়। গ্রামাঞ্চলে এই গাছ বেশি দেখা যায়। শিশুরা এর ফল খেলার সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করে। আবার শিশুরা এর শ্বাস খেতেও ভালবাসে। এর শ্বাস খেতে চীনাবাদামের মতো।”
বিশ্ব মুক্তকোষ উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ‘কাঠ বাদাম (বৈজ্ঞানিক নাম: Terminalia catappa) একটি বৃহদাকৃতির গাছের ফল। ফলের নাম অনুযায়ী এই গাছকে কাঠ বাদাম গাছ ডাকা হয়। এটি নিরক্ষীয় অঞ্চলে জন্মানো লেডউড জাতীয় Combretaceae পরিবারের একটি বৃক্ষ।
কাঠবাদামের গাছের আদি নিবাস কোথায় তা জানা যায় না। এটি আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়াসহ অস্ট্রেলিয়া অবধি উষ্ণ অঞ্চলে জন্মে থাকে। সাম্প্রতিককালে আমেরিকা মহাদেশেও এই গাছটি বিস্তার লাভ করেছে। একে নানা নামে বিভিন্ন স্থানে ডাকা হয়, যেমন বেঙ্গল আখরোট, সিঙ্গাপুর আখরোট, ইবেলবো, মালাবার আখরোট, নিরক্ষীয় আখরোট, সমুদ্র আখরোট, ছাতা গাছ, আব্রোফো ন্কাটি, জানমান্দি ইত্যাদি।
কাঠ বাদামের গাছ ৩৫ মিটার (১১৫ ফুট) উঁচু হয়। গাছটির উপরের দিক থেকে আনুভূমিকভাবে ডালপালা বের হয়। এর ফলটি রসালো প্রকারের ও ভেতরের প্রকোষ্ঠে কয়েকটি বিচি থাকে। ফল পাকলে এই বিচিগুলো খাবার যোগ্য হয়। বিচিগুলো খেতে অনেকটা আখরোটের মতো। গাছের বয়স বাড়লে এর উপরের দিকের ডালপালা অনেকটা চ্যাপ্টা হয়ে যায়, দেখতে ফুলদানীর মতো লাগে। শাখা-প্রশাখাগুলো স্তরে স্তরে সাজানো থাকে। পাতাগুলো আকারে বেশ বড়ো, ১৫-২৫ সেমি (৫.৯ – ৯.৮ ইঞ্চি) দীর্ঘ, এবং ১০-১৪ সেমি (৩.৯-৫.৫ ইঞ্চি) চওড়া, ডিম্বাকার, এবং চকচকে সবুজ বর্ণের হয়। শুষ্ক মৌসুমে পাতা ঝরে যায়। ঝরার আগে পাতাগুলো গোলাপী-লাল বা হলদেটে-খয়েরি রঙের হয়ে যায় (এর কারণ হলো ভায়োলাক্সান্থিন, লুয়েটিন ও যিক্সান্থিন নামের রঞ্জক পদার্থ)।’
শিশুদের প্রিয় ফল কাঠবাদাম
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/