Site icon suprovatsatkhira.com

রাজনীতিতে সৎ থাকাও বড় আন্দোলন

সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। ছিলেন সাংস্কৃতিক কর্মী। এরশাদের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের মধ্যদিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি। ১৯৮৩ সালে ছাত্র মৈত্রীর সাতক্ষীরা জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৯ সালে কমিউনিস্ট লীগের সাতক্ষীরা জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে তিনটি পার্টি ঐক্যবদ্ধ হয়ে গঠিত ওয়ার্কার্স পার্টির শুরু থেকেই সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০৪ সালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বিকল্প সদস্য ও ২০০৮ সালে পূর্ণ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সাল থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটব্যুরোর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জনগণের জন্য কাজ করছেন। ‘ব্যক্তিগত জীবন, সাতক্ষীরায় বামপন্থী রাজনীতির বর্তমান অবস্থা ও বিকাশ’ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন সুপ্রভাত সাতক্ষীরা’র সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাহলুল করিম, আব্দুল কাদের ও আরিফুল ইসলাম রোহিত।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: কেমন আছেন?
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: হ্যাঁ, ভালো আছি।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার জন্মস্থান, পরিবার-পরিজন ও পূর্বপুরুষের বসতি সম্পর্কে জানতে চাই-
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: ১৯৬১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা শহরের প্রাণসায়ের এলাকায় নানার বাড়িতে আমার জন্ম। আমরা চার ভাই, তিন বোন। আমার পূর্ব-পুরুষগণ প্রথমদিকে কালিগঞ্জ, শ্যামনগর পরবর্তীতে সাতক্ষীরা শহরে বসবাস করেছেন। এখন আছি পলাশপোল, আহম্মদ মিলিটারির বস্তিতে (হাসতে হাসতে)। এই বাড়িটুকুই সম্বল। আমার আর কোথাও কোন কিছু নেই। এজন্য সাংবাদিক তথা জনগণের কাছে হিসাব দেবার ফর্দ্দও লম্বা নয় (আবারও হাসি)।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার বাবা কী করতেন?
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: আমার বাবা ১৯৫৩ সালে ডিগ্রি পাস করেন। তিনি একাধারে পূর্ব পাকিস্তান আইজি’র সিভিল স্টাফ অফিসার, ওয়াপদার সহকারী পরিচালক এবং প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার-এর দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু নৈতিকতার কারণে শিক্ষাকতা পেশাকে তিনি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আমৃত্যু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দাযিত্ব পালন করেছেন।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার শিক্ষা জীবন?
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: বাবার চাকুরির জন্য বারবার বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছি। এজন্য পড়াশুনা বিভিন্ন জায়গায় করতে হয়েছে। ১৯৬৫ কি ৬৬ সালে বাবুলিয়া মল্লিকপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়েই বই হাতে প্রথম যাওয়া। যে স্কুলটি পরে সরকারি হয়েছে। এরপরে সুলতানপুর প্রাইমারি স্কুল, তালার বাউখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তালা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিলভার জুবলি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিআই সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সর্বশেষ কলারোয়া দেয়াড়া কাশিয়াডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৭১ সালে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেছি। সে সময় প্রাথমিকে বৃত্তিও পেয়েছিলাম। পরে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হই। অষ্টম শ্রেণিতে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলে ভর্তি হলাম। ঢাকা থেকে ফিরে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হলাম পলাশপোল হাইস্কুলে। ১৯৭৭ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অধীনে। তবে সেখানে কোন উল্লেখযোগ্য রেজাল্ট করতে পারিনি। আমি আসলে অতটা মেধাবী ছিলাম না (হাসতে হাসতে)। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও ১৯৮১ সালে কলা বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করি। ডিগ্রি শেষ করে আইন বিষয়ে পড়ার জন্য ‘ল’-তে ভর্তি হয়েছিলাম খুলনা সিটি কলেজে। ১৯৮৯ সালে এলএলবি পাশ করি।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: পড়াশুনা শেষে-
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: ১৯৯০ সালে বার কাউন্সিল থেকে অনুমোদন নিয়ে সাতক্ষীরা জজ কোর্টে আইন পেশায় যুক্ত হই।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: বাল্যকালে কেমন ছিলেন? সেই সময়গুলো কিভাবে কাটিয়েছেন?
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: ছোটবেলায় ভেবেছিলাম একটা ছোট দোকান দেব। দোকানে কটকটি থাকবে, বিস্কুট থাকবে, মোচড় থাকবে। বিক্রি করবো আর নিজে নিজে খাবো। একবার কি হলো, যখন রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলে বৃত্তির জন্য যাচাই-বাছাই পরীক্ষা দিলাম, কিন্তু আমি উত্তীর্ণ হলাম না। ১৫ জন নেবে কিন্তু আমি ১৭তম হলাম। মাত্র তিন মার্কের জন্য। তাই ভাবলাম, লেখাপড়া আর করবো না। তো কি করবো-ভেবেই নিলাম ট্রাকের হেলপার হবো। যেই ভাবা সেই কাজ। ট্রাকের হেলপারি শুরু করে দিলাম। ট্রাকের মালিকের সাথে পরিচয় হতে গিয়ে দেখি তিনি আমাদের আত্মীয়। তখন তিনি আমাকে যত্ন করে জামা- কাপড় কিনে আর টাকা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। তখন আমার বাবার যা আয় ছিল তা খুবই সামান্য। তবে আমার বাবা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার কারণে ইংরেজি ভালো পারতেন। যে কারণে বিভিন্ন সরকারি, বে-সরকারি লোকজন আসতো আমাদের বাড়ি বিভিন্ন বিষয় ইংরেজিতে অনুবাদ করার জন্য। তারা যা দিতেন তাও ছিল খুবই সামান্য। এসএসসি থেকে ডিগ্রি অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের তিনি প্রাইভেট পড়াতেন। সে সময় তো এখনকার মতো টাকা চেয়ে নেওয়া হতো না। তারা সন্তুষ্ট হয়ে যা দিতো তাই নিতেন। কেউ লাউ আনতো, কেউ আনতো বিভিন্ন রকম তরিতরকারি ফলমূল, কেউ আনতো দুধ আবার যাদের সামর্থ ছিল তারা কিছু অর্থ দিতেন। আর তাতেই বাবা খুশি মনে পড়াতেন। আর আমাদের চার ভাই তিন বোনের সংসারে তাই অভাব সবসময় লেগেই থাকতো। এজন্য আমাকে ছোটবেলা থেকেই রং মিস্ত্রী, কাঠ মিস্ত্রী, ডেকোরেশনের হেলপারের কাজ করতে হয়েছে। মাঝে মাঝে প্রাইভেটও পড়িয়েছি। এভাবে পড়াশুনার খরচ চালিয়েছি।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: পড়াশুনা শেষে সরকারি চাকরির চেষ্টা করেন নি?
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: ১৯৮০ সালে চাকরি পেয়েছি সমাজকল্যাণ বিভাগে, চাকরি পেয়েছি সেনাবাহিনীর ক্যাডেট অফিসার হিসেবেও। কিন্তু আমার পিতা চান নি আমি চাকরি করি। বাবা ভাবতেন, চাকরির ক্ষেত্রে স্বাধীনতা নষ্ট হয়। এজন্য চাকরির ক্ষেত্রে তার অনীহা ছিল।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: ছোটবেলার এমন কোন ঘটনা আছে, যা আপনাকে ভাবিয়ে তোলে-
মুুস্তফা লুৎফুল্লাহ: ছোটবেলার তো সব কথাই মনে পড়ে। তখন মোবাইল ছিল না। বিদ্যুৎ ছিল না। সেসময় সকালে উঠতাম। যখন পিটিআইতে পড়তাম, ঠিক একই সময় জুবলি স্কুলে পড়তাম। সেময় পিটিআইতে খাবার দিতো। যেদিন জুবলি স্কুলের পড়া হতো না, সেদিন পিটিআইতে যেতাম। আবার যেদিন পিটিআইতে খাবার দিতো না সেদিন জুবলিতে যেতাম। বাবা শিক্ষক হওয়ার কারণে সব জায়গায় আমার একটা পরিচিতি ও অবাধ বিচরণ ছিলো। সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে মায়ের কাছে পানতা ভাত চাইলে মা যদি কাজে ব্যস্ত থাকতেন তবে ভাত দিতেন না। তখন কাছে পাঁচ পয়সা বা এক আনা থাকলে তা দিয়ে গোল্লা (আটা দিয়ে তৈরি একপ্রকার খাদ্য) খেতাম। না থাকলে তখন টিউবওয়েলে মুখ লাগিয়ে পানি খেয়ে চলে যেতাম। স্কুল শেষ করে এসে গোসল করতে যেতাম। মা যত সময় লাঠি নিয়ে না যাবে তত সময় গোসল করতাম। তারপর ভাত খেয়ে মা ঘুমাতে বলতেন। কিন্তু মা ঘুমিয়ে পড়ার সাথে সাথে আমি স্টেডিয়ামে চলে যেতাম খেলা করতে। সেসময় পাড়ায় পাড়ায় খেলধূলা হতো। একটা সামাজিক শাসন ছিলো। কেউ কোন অন্যায় দেখলে সাথে সাথে নিজের ছেলে মনে করে শাসন করতো। গ্রামের মুরুব্বিরা সকল ছেলে-মেয়েকে নিজের ছেলে-মেয়ে ভাবতেন।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: রাজনীতিতে আসলেন- হাতেখড়ি কীভাবে?
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তাম। তখন মিছিল হতো। দেখেছি মুস্তাফিজ ভাই, ময়না ভাই’রা মিছিল করতেন। আমরা তাদের সাথে মিছিল করতাম। শ্লোগান দিতাম। তখন আনুষ্ঠানিকতা ছিল না, কেবলমাত্র সম্পৃক্ততা ছিল। তবে মূল কথা হলো, একবার বাবার কাছে আবদার করলাম, তুমি আমাকে প্যান্ট আর একটা চেকের শার্ট কিনে দেবে। এই কথা শোনার পরে বাবা দুই আনা দিয়ে আমাকে একটা খাতা কিনে আনতে বললেন। তখন আমরা পলাশপোল চৌরঙ্গী মোড়ে থাকতাম। তো তিনি পলাশপোল চৌরঙ্গী মোড় থেকে পাড়ার সব বাড়িগুলোতে গিয়ে কার কয়জন সন্তান আছে তা লিখে আনতে বললেন। বলে রাখা দরকার, তখন সরকার স্কুলে স্কুলে ছাতু (গম দিয়ে তৈরি এক প্রকার খাদ্য) দিতো। আমার বাবা প্রধান শিক্ষক হওয়ার কারণে আমাদের বাড়িতে রাখা হতো সেই ছাতু। তো আমি ভাবলাম সেই ছাতু দেওয়ার জন্যই বুঝি এই তালিকা করা হচ্ছে। পরে আবার একদিন বললেন যে, এই যে তালিকা করেছ এর মধ্যে এই ঈদে কে কি নেবে তা লিখে আনো। তো আমি যে তালিকা আনলাম তাতে দেখা গেল বেশিরভাগ লোকই এই ঈদে কিছুই নেবে না। কারণ তাদের সামর্থ নেই। তো বাবা তখন বললেন, দেখ এই তালিকার মধ্যে তোমার বন্ধু কে কে? এবার আমি কিছু বুঝতে না পেরে যারা কিছুই নেবে না তাদের দলে থাকার কথা বললাম। তখন বাবা বললেন, তাহলে এরা যেহেতু কিছুই নেবে না সেহেতু তোমারও কিছু নেওয়া হবে না। তখন বাবার উপর বেশ ক্ষোভ তৈরি হলো। কিন্তু এই ঘটনা আমাকে পরবর্তীতে ভাবিয়েছে। অর্থাৎ মানুষের নৈতিক অধিকার- সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থা- এই ভাবনা থেকেই রাজনৈতিক প্রেরণা পাই।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: তারপর রাজনীতিতে যোগ দিলেন?
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: রাজনীতিতে আসার আগে আমি ছিলাম সাংস্কৃতিক কর্মী। আমি প্রগতি সংঘের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। সাতক্ষীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। এরশাদের সামরিক শাসনকালে সাংস্কৃতিক কর্মী হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করি। তখন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সংগঠিত হয়ে আন্দোলন করেছিল। তাদের সাথে সেই হিসেবে পরিচিত ছিলাম। তখন আবার বাম রাজনীতির দু’টি ধারা ছিল। একটি সশস্ত্র আরেকটি প্রকাশ্য। কিন্তু আমি সশস্ত্র ধারাকে সঠিক মনে করতাম না। যে কারণে এই রাজনীতিতে আসতে চাইলেও সশস্ত্র ধারা থাকার কারণে যোগ দিতাম না। যতদিন পর্যন্ত এই সশস্ত্র ধারা বাম রাজনীতি অনুসরণ করেছে ততদিন আমি তাদের সাথে যোগ দেইনি। আমি মনে করি অস্ত্র দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না। অস্ত্রের ভয় দিয়ে জনগণের সমর্থন পাওয়া যায় না। মানুষ অস্ত্রের ভয়ে তাকে সম্মান করবে কিন্তু প্রকৃত সম্মান করবে না। ঠিক সেই সময় বাম রাজনীতিতে পরিবর্তন আসে। তারা সশস্ত্র ধারা পরিহার করে। সেই সময় আমি এরশাদের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের জন্য ছাত্র মৈত্রীতে যোগ দিলাম। আমি জেলা ছাত্র মৈত্রীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হলাম এবং এক প্রকার মূল সংগঠনের চাইতে ছাত্রমৈত্রীতে বেশি ভূমিকা রাখলাম। আর এর মাধ্যমেই রাজনীতিতে প্রবেশ করলাম।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: এরপর বামধারার রাজনীতিতে পুরোপুরি নিজেকে জড়িয়ে ফেললেন-
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: আমি ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য ছিলাম। আর সেখান থেকে শ্রমিক রাজনীতিতে আসি। ভেবেছিলাম টেক্সটাইল মিলে চাকরি নেব। কিন্তু সেখানে আমরা রাজনীতিক হিসেবে চিহ্নিত থাকার কারণে ঢুকতে পারলাম না। তবুও সেখানে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করতাম। মিল শ্রমিক নিতাই ও আকরামকে একদিন সন্ধ্যা বেলায় গ্রেফতার করলো। তখন ডিসি ছিলেন রফিউদ্দিন ভ‚ইয়া। সেই আন্দোলন এবং গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে তার সাথে অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটে। তারপর আমাকে গ্রেফতার করে ডিটেনশন প্রদান করে। সে সময় ১৮ মাস জেলে ছিলাম। জেলাখানা থেকে ‘ল’ পাস করেছি। এদিকে ১৯৮৯ সালে কমিউনিস্ট লীগের সাতক্ষীরা জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হই। তারপর কমিউনিস্ট লীগ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও মজদুর পার্টি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯৯১ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি গঠিত হয়। শুরু থেকেই ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা জেলার সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। পরে ২০০৪ সালে বিকল্প সদস্য ও ২০০৮ সালে পূর্ণ সদস্য হই। ২০১৪ সালে ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি ও পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য হই।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনি ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি। এই এলাকায় ওয়ার্কার্স পার্টির সাংগঠনিক সক্ষমতা বিকাশে কতটুকু ভ‚মিকা রাখতে পেরেছেন-
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: আমরা সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। ১৯৮৭ সালে শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন করেছি। সে সময় বিডিআরের গাড়ির তলায় পড়ে তালতলার রহিমা মারা যায়। সেই হত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে মিলের ভেতরের রাস্তার নাম রহিমা সড়ক দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে আমাদের সরব উপস্থিতি ছিলো। স. ম. আলাউদ্দিন হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেছি। তালা উপজেলার খলিশখালী, জালালপুর, খেশরা ও মাগুরা ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যাপক আন্দোলন সংগঠিত হয়। ওই আন্দোলনে অন্যতম সংগঠকের ভ‚মিকা পালন করি। জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে আন্দোলন সফল হয়। ভ‚মিহীন আন্দোলনে সহযোগিতা করেছি। জায়েদা মারা যাওয়ার পরে আন্দোলনকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি। আমি নিজেও আহত হয়েছি। জলাবদ্ধতা নিরসনে ‘কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন’ গড়ে তুলি। মানুষের সাড়া পেয়েছি। আন্দোলন সফল হয়েছে। কপোতাক্ষ তীরবর্তী মানুষ আজ জলবদ্ধতা মুক্ত।
আমাদের আন্দোলন বরাবরই ছিল জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হওয়ার পরে ১৪ দল গঠন হয়। ১৪ দলের সদস্য সচিব হিসেবে বিএনপি-জামায়াত সরকারকে রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে অপসারণের আন্দোলন করি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে জামায়াত-বিএনপির সশস্ত্র তাণ্ডব রাজপথে থেকে প্রতিহত করি।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: বর্তমানে জাসদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টির মত বড় দুটি বাম দল সরকারের সাথে অবস্থান করছে- এই প্রেক্ষাপটে সাতক্ষীরায় বাম রাজনীতির বিকাশ নিয়ে কি ভাবছেন?
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে এদেশের রাজনীতি পেশি শক্তি, কালো টাকা ও সন্ত্রাসের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ব্যাংক তৈরি করে ডাকাতি করার কথা। আগে রাস্তাঘাটে ডাকাতি হতো, পুলিশের হাতে ধরা পড়তো। তাই এসব ডাকাতরা চিন্তা করলো কিভাবে পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তারা তখন ব্যাংক ব্যবস্থার উদ্ভব করলো। আর এখন মানুষ সেই ব্যাংকে টাকা-পয়সা রাখে। এখন আর পথে ডাকাতি করা লাগে না। এই ডাকাতরাই আমাদের দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের আন্দোলন সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িক শক্তি, লুটেরা রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমাদের ধারাকে ঐ অপশক্তি ধ্বংস করেছে। বর্তমানে কালো টাকা ও কালো রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে বাম ধারাকে বিকশিত হতে হচ্ছে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: ২০১৩ সালে ঘটে যাওয়া সহিংসতার সময় আপনার ভ‚মিকা কী ছিল?
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: ২০১২ ও ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াত সশস্ত্র সহিংসতা ঘটালো, রাস্তা কাটলো, ট্রেন লাইন উড়িয়ে দিলো, বাস পুড়িয়ে দিলো, পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করলো- ওয়ার্কার্স পার্টি চেয়েছিলো রাজনৈতিকভাবেই এর মোকাবেলা করতে। আমি সহিংসতা প্রতিরোধে সরাসরি রাজপথে থেকে কাজ করেছি। মামুন, রবিউল, জজ, আজিজুলসহ ১৭ জনকে জামায়াত-শিবির নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। স্বাভাবিকভাবে এসব কারণে কোন নেতা-কর্মী বাড়িতে ছিল না। জননেত্রী শেখ হাসিনার একটা চ্যালেঞ্জ ছিল- এই দেশ ৭১’এ পরাজিত শক্তির কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ করবে, না কি তাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবে? আমাদের কাজ ছিল ভোটারদের ফিরিয়ে আনা। আমার তা করেছি। আমরা স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চেয়েছি এবং তা পেরেছি। আজকে হরতাল হচ্ছে না। যে কারণে আমাদের দেশ উন্নয়নশীল দেশের পথে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: অন্যান্য বাম দলগুলো আপনার কাছে সহযোগিতা চাইতে আসে?
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: হ্যাঁ, আসে তবে আর্থিক সহযোগিতার জন্য। আমার সামর্থ অনুযায়ী তাদের সহযোগিতা করি। তারা তাদের সমাবেশে আমাকে আহবান করলে আমি যাই। কিন্তু তাদের কাউকে আমার দলে টানতে কোন রকম প্রলুব্ধ করি না।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার রাজনৈতিক জীবনে কোন বাঁধা এসেছে – কীভাবে মোকাবেলা করেছেন?
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: অনেক বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি। ভূমিহীন আন্দোলনের সময় কোর্টের ভিতরে লাঞ্ছিত হয়েছি। দেড় বছর জেল খেটেছি। জাসদের কাজী রিয়াজ ভাইকে আটকের ঘটনায় আন্দোলনে এক বছর পনের দিন জেল খেটেছি। খাল দখলমুক্ত আন্দোলনের সময় আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আবার আমার জনগণই আমাকে মুক্ত করে এনেছে। অর্থাৎ অসুস্থ ধারার রাজনীতিতে এরকম বাঁধা আসবে। এসেছেও – মোকাবেলাও করেছি জনগণকে সাথে নিয়ে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তালা-কলারোয়ায় কতটুকু কাজ করতে পেরেছেন, কী কী বাঁধা এসেছে?
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: জামায়াত-শিবির-বিএনপির সশস্ত্র তাণ্ডব প্রতিহত করে স্থিতিশীল অবস্থা তৈরি, নির্বাচনী এলাকায় প্রায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন, শতাধিক শিক্ষা ভবন নির্মাণ, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, রাস্তা সংস্কার ও নির্মাণ হয়েছে। জাতীয় বাজেট যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে- সেই হারে ব্যপক উন্নয়ন হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় যে উন্নয়ন, তা হলো জলাবদ্ধতা নিরসন হয়েছে। জলাবদ্ধতা না থাকার কারণে তালা-কলারোয়ার কৃষক ১৮ বছর পরে মাঠে ধান চাষ করতে পেরেছে। তাদের সেই খুশি দেখে আমি আপ্লুত হয়েছি। রাজনৈতিক সহনশীলতা বজায় থাকলে উন্নয়ন হতে বাধ্য। আমরা সেই রাজনৈতিক সহনশীলতা এনেছি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আমাদের এই অঞ্চলে উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। সার্কভুক্ত দেশে কেউ বলতে পারবে না তাদের দেশে ফ্রি বই বিতরণ করা হয়- কিন্তু আমাদের দেশে হয়।
সাতক্ষীরাতে কোন শিল্প গড়ে ওঠেনি। তার প্রধান বাঁধা হচ্ছে- কী শিল্প আমরা গড়ে তুলবো। আমাদের মাধ্যমিকের নিচে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বেশি। তাদের কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে। তাদের যোগ্যতার উপযোগী করে কর্মক্ষমতা বাড়াতে হবে। একটা সময় দেখা যাবে বেকারত্ব নেই। আমাদের জেলায় অর্থনৈতিক জোন সৃষ্টি হবে এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হবে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার প্রেক্ষাপটে বাম ধারার রাজনীতি বিকশিত হচ্ছে না কেন? বাম ধারার রাজনীতি বিকাশের জন্য কী কী করা উচিৎ বলে করেন?
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: বিকশিত হওয়ার জন্য যে রাজনৈতিক সচেতন সংগঠক প্রয়োজন তা আমাদের এখনো তৈরি হয়নি। আমাদের জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ অধ্যাপনা, শিক্ষকতা, আইন পেশা ও কৃষি কাজে যুক্ত। তারা রাজনীতিতে সার্বক্ষণিক সময় দিতে পারেন না। কিন্তু অন্য দলের নেতাকর্মীরা সার্বক্ষণিক সময় দিতে পারেন কারণ তাদের কালো টাকা আছে। তাদের বিকাশ আর আমাদের বিকাশ এক হতে পারে না। আরও একটি বিষয়, জনগণ আমাদের পাশে পেলে তো আস্থা রাখবে, পাশে না পেলে তো আর রাখবে না। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জনগণের সংকটে তার পাশে থাকলে আমাদের প্রতি আস্থা- বিশ্বাস গড়ে উঠবে। এ জন্য বাম ধারার রাজনীতিকে বিকশিত করতে আর ভালো ধারার রাজনীতিতে ফিরতে বাম রাজনীতিবিদরা আরও বেশি ত্যাগ, মেধা, সৃজনশীলতা দিয়ে মানুষের পাশে যতক্ষণ না দাঁড়াতে পারবে ততক্ষণ বিকাশ সম্ভব নয়।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সামনে একাদশ সংসদ নির্বাচন, কী ভাবছেন?
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: আমরা সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। আর সেই লক্ষ্যে ১৪ দল গঠন করেছিলাম। সে জন্য সে সময় আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমি যে দল করি সে দলের নিয়ম হচ্ছে দল আমাদের মনোনীত করে। আমি মনোনয়ন চাইতে পারি না। দল যদি বলে আমাকে নির্বাচন করতে হবে – তবেই নির্বাচন করবো। নির্বাচনী কার্যক্রমটি কিন্তু একদিনের নয় যে আজ তফশিল ঘোষণা হলো, নেমে গেলাম। পুরো পাঁচ বছরের কাজের উপর নির্ভর করে। সেক্ষেত্রে আমার যদি ইতিবাচক কাজ থাকে আর নেতিবাচক কাজ না থাকে তবে মানুষ আমাকে ভোট দেবে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা জানতে চাই-
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের ঘটনা হচ্ছে আমার সন্তানের আত্মহনন। সে আমার রাজনৈতিক বন্ধু ছিল। সে আমার গাড়ি চালক ছিল, ছিল আমার গল্পের সাথী, আমার কম্পিউটারের যাবতীয় কাজ করতো। সে ছিল আমার বন্ধু।
আর একটি কষ্টের ঘটনা আছে। সেটি হলো ২০১৩ সালে মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। সেই ঘটনা আজও আমাকে কষ্ট দেয়। সেই লাশগুলো আমি দেখেছি- আমার পরিবারকে সাথে নিয়ে দেখেছি। পোস্টমর্টেমের সময় লাশকাটা ঘরে থেকেছি- থেকেছি তাদের পরিবার-পরিজনদের পাশে- দেখেছি তাদের আর্তনাদ।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: অবসরে কী করতে ভালবাসেন?
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: অবসর সময়ে আমি আড্ডা দিতে পছন্দ করি। এছাড়া বেশি বেশি গান শুনি। তবে এখনও ঈষিকাতে আমরা আড্ডা দেই। সব শ্রেণিপেশার মানুষ এক জায়গায় হয়। আর জেলে থাকলে বই পড়ি (হাসতে হাসতে)।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: কীভাবে একজন রাজনীতিক সফলতা পেতে পারে?
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: মানুষ যদি মানুষের কাছ থেকে ধিকৃত না হন, মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারেন – তবেই তার সফলতা। ঠিক একইভাবে রাজনীতিবিদ যদি গণধিকৃত না হন তবেই তার সফলতা।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: রাজনৈতিক জীবনে আপনি সবচেয়ে কাকে বেশি পাশে পেয়েছেন?
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: পাশে পেয়েছি আমার স্ত্রীকে, সেই সব সময় পাশে থেকেছে। এছাড়াও পরিবার আমার পাশে আছে।
আমাদের এখানে একই বাড়ির মধ্যে বা একই পরিবারের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীর দেখা মেলে। তার অনেক প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু আমার পরিবার যদি আমার রাজনীতি গ্রহণ না করে তবে অন্য মানুষ কেন গ্রহণ করবে। আমি যদি আমার পরিবারের মানুষকেই বোঝাতে না পারি তবে অন্য মানুষ কেন বুঝবে। ২৬টি খাল নিয়ে আন্দোলনে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। সেই আন্দোলনে আমি বেলবন্ড কিনতে পারছিলাম না। আমি বাড়ি এসে খুবই চিন্তা করছি কোথায় টাকা পাবো। ঠিক সেই সময় আমার স্ত্রী তার গহনাগুলো আমার কাছে দিয়ে বলে, “যাও, এগুলো বিক্রি করে বেলবন্ড কিনে আনো”। ঠিক এভাবেই আমার পরিবার আমার রাজনীতিকে বুঝেছে। আমার স্ত্রীও ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা কমিটির সদস্য। রাজনীতিতে সৎ থাকার ক্ষেত্রে পরিবারের সহযোগিতা প্রয়োজন রয়েছে।
আমার পকেটে যদি টাকা থাকে তবে আমার স্ত্রী জিজ্ঞেস করে, “কোথায় পেলে এই টাকা?” আবার আমি যদি টাকা বাড়ি থেকে নিতে চাই, তবে টাকা কী কাজে খরচ করবো সেই হিসেবও আমাকে দেওয়া লাগে। তবে মজার ব্যাপার হলো আমাদের কার কত টাকা আছে সেই হিসাব আমাদের পরিবারের সবাই জানে। এজন্য প্রত্যেকে তার চাহিদা অনুযায়ী জিনিসপত্র কিনতে পারে। আমরা কিন্তু ঈদের সময় কিছু কিনি না। কারণ ওই যে বাবা শিখিয়েছিলেন, অধিকাংশ মানুষই কিছু কিনতে পারে না।
আমরা মূলত দুর্নীতি আর দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলি। নিজে সৎ থাকাও একটা বড় আন্দোলন। সুযোগ থাকার পরও অপরাধ না করা মানে সততার লড়াইয়ে জেতা।
দশম সংসদ নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টি এই প্রথম সাতক্ষীরায় জয়ী হয়েছে। এখন আমার যদি সন্ত্রাসী, দখলাবাজি, মানুষকে হয়রানি করার ইতিহাস থাকতো তাহলে কিন্তু মানুষ বামধারার সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে কলুষিত করতো। আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মাধ্যমে এটা প্রমাণ করাতে পেরেছি যে সৎ থেকেও রাজনীতি করা যায়। আমাদের কোন রাজনৈতিক কর্মী টিআর কাবিখার প্রতি প্রলুব্ধ নয় কিংবা নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত নয়।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনি কি মনে করেন আপনার সব যোগ্যতা দিয়ে নির্বাচনী এলাকায় কাজ করতে পেরেছেন?
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: না, পারিনি। আমলাতান্ত্রিক ও আঞ্চলিক জটিলতার কারণেই আমি তা পারিনি।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ: সুপ্রভাত সাতক্ষীরা ও সুপ্রভাত সাতক্ষীরার পাঠকদের ধন্যবাদ।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version