Site icon suprovatsatkhira.com

নৈতিকতা চর্চায় স্কুলে ‘সততা স্টোর’

ফাহাদ হোসেন: সাতক্ষীরা শহরের দুটি স্কুলে বাচ্চাদের নৈতিকতা চর্চার জন্য ছয় মাস আগেই চালু করা হয়েছে সততা স্টোর। স্টোরে রাখা আছে খাবার, খাতা-কলমসহ একাডেমিক সামগ্রী। টাকা পরিশোধের জন্য রয়েছে একটি বক্স। পণ্যের গায়ে লাগানো দাম দেখে নিজ দায়িত্বে টাকা পরিশোধ করে শিক্ষার্থীরা। নেই কোনো দোকানি, নেই নজরদারি ক্যামেরাও। স্টোরে থাকা একটি পণ্য অতিরিক্ত নিলে বা টাকা না দিলে দেখার কেউ নেই। তবুও সপ্তাহ শেষে পণ্য গুণে পড়ছে না টাকার ঘাটতি। এতেই প্রমাণ হয়, বেড়ে ওঠার পরিবেশে তাদের নৈতিকতা শিক্ষা দিতে পারলে দুর্নীতিমুক্ত জাতি গড়ে তোলা সম্ভব।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাতক্ষীরা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে চালু করা হয় এ সততা স্টোর।
স্কুল দুটিতে গিয়ে দেখা যায়, স্টোরের চারপাশের তাকে সাজানো আছে বিস্কুট, চকলেট, কেক, চিপস্সহ বিভিন্ন খাবার। এছাড়াও রয়েছে কলম, পেনসিল, খাতা, রাবারসহ বিভিন্ন শিক্ষাসামগ্রী। মূল্য পরিশোদের জন্য রয়েছে বক্স। কিছু নির্দেশনাও লেখা আছে। স্কুল শুরুর সময় থেকে শেষ পর্যন্ত স্টোর খোলা থাকে। শিক্ষার্থীরা স্টোর থেকে পছন্দ মতো দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে বক্সে মূল্য পরিশোধ করছে। আবার ক্রয় করার পদ্ধতি সম্পর্কে বুঝতে না পারলে শিক্ষকদের পাশাপাশি ক্যাপ্টেনের সহযোগিতাও নিচ্ছে।
সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুলের সহকারি শিক্ষিকা রেবেকা সুলতানা বলেন, প্রতি মাসে ৩০হাজার টাকার মত বেচাকেনা হয়। সপ্তাহ শেষে স্টোরের পণ্যগুণে টাকা মিল করি। অনেক সময় টাকা বেশি পাওয়া যায়, অনেক সময় দু’চার টাকা কম পাওয়া যায়। কারণ টাকা ভাঙানোর কোনো সুযোগ এখানে থাকে না। যারা একদিন টাকা ভাঙিয়ে দিতে পারে না তারা পরের দিন সেই টাকা নিজ দায়িত্বে এসে দিয়ে যায়।
একই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা সাহানা হাসিম বলেন, ‘সততা স্টোর’ থেকে যেসব শিক্ষার্থী পণ্য কিনছে, পণ্য কেনার পাশাপাশি তাদের সততা এবং বিবেকের পরীক্ষাও দিতে হচ্ছে। যে কেউ চাইলে এখান থেকে মূল্য পরিশোধ না করে চুপিচুপি পণ্য নিয়ে চলে যেতে পারবে। কিন্তু তারা সেটা করছে না। কারণ, এটি একটি সততা চর্চাকেন্দ্র। সততার পরীক্ষায় আমাদের দৃষ্টিতে ‘ছোটরা’ হারতে চায় না, জিততে চায়।
কয়েকজন অবিভাবক জানান, সৎ, সমৃদ্ধ এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও দেশ গঠনে এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে তৈরি করতে হবে। তাদের মধ্যে সততার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাহলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে দুর্নীতি বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকবে না।
সাতক্ষীরা কালেক্টরেট স্কুলের ৩য় শ্রেণির ছাত্রী অহনা বনিক গল্প বলে, এখানে আমাদের খাবার এবং খাতা-কলম, পেন্সিল সব পাই। এখান থেকে কিনতে আমাদের ভাল লাগে।
সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুলের পরিচালক মো. আলাউদ্দিন ফারুকী প্রিন্স বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের ব্যবস্থাপনায় জানুয়ারি মাসে এই সততা স্টোর চালু করেছি। সমাজে সবাই সৎ এরকমটা না। এর প্রভাব বাচ্চাদের উপর পড়তে পারে। আমরা সব সময় বাচ্চাদের সততার গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেই। এবং সততার ব্যবহারিক ক্লাস হিসাবে এই সততা স্টোরের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। পাশে ক্যান্টিন থাকা সত্ত্বেও সবাই সততা স্টোর থেকে পণ্য কিনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
সাতক্ষীরা কালেক্টরেট স্কুলের একাডেমিক ইনচার্জ রবিউল ইসলাম বলেন, যেহেতু সততা স্টোরে তারা ঢুকছে একা, একা নিচ্ছে, একা টাকা দিচ্ছে। এতে নিজেদের আত্মসংযম ও বিবেকবোধ জাগ্রত হচ্ছে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version