আরিফুল ইসলাম রোহিত: ফুলের দিকে তাকালেই মন ভালো হয়ে যায়। সুখ অনুভব হয়। কিছু ফুল আছে ভক্ষণযোগ্য ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ধর্মীয় কাজেও ব্যবহৃত হয় কিছু কিছু ফুল। এমনই একটি ফুল জবা। রোগের প্রতিষেধক হিসেবে রয়েছে এর চমৎকার গুণ। চুলের যতেœও ব্যবহার করা হয় জবা ফুল। জবা ফুল গোলাপী, সাদা, লাল, হলুদসহ নানা বর্ণের হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাল জবা আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য ভালো রাখতে জবা ফুলের গুনাগুণ অতুলনীয়। এদিক থেকে জবা শুধু একটি ফুলই নয়, ওষুধও বটে। জবা ফুল ব্যবহৃত হয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজায়ও।
জবা ফুলের উৎপত্তি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে হলেও বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে এই ফুল পাওয়া যায়। সাধারণত জবা গাছের উচ্চতা ৮ থেকে ১৬ ফুট। এই গাছের পাতাগুলো চকচকে সবুজ রঙের। ফুলগুলো উজ্জল বর্ণের। গ্রীষ্মকাল ও শরতে এ ফুল ফোঁটে। পাঁচটি পাপড়ি সমৃদ্ধ এ ফুলের ঠা-া সহ্য ক্ষমতা কম। ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রায় এ ফুল ঝরে পড়ে।
ভারতীয় উপমহাদেশের বেশিরভাগ দেশে এ ফুল জবা নামেই পরিচিত। তবে, তামিলে সেম্বারুথি, পাকিস্তানে জবা কুসুম, মালয়ে সেম্পারাত্তি বলেই অভিহিত।
সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা গ্রামের হুমায়রা সুলতানা তামান্না জানান, জবা ফুলের পাতার রস তেলের সাথে মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করেন তিনি। এতে চুল ঘন হয় ও চুল পড়া কমে। এছাড়া তিনি জানান, এই ফুলের রস মিশ্রিত তেল মাথায় দিলে মাথার ত্বক ভালো থাকে এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী বিমলা কর্মকার জানান, জবা ফুল তাদের পূজা অর্চনায় বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বিপত্তরাণীর পূজায় মহিলারা জবা ফুল বেশি ব্যবহার করেন। মূলত বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য এ দেবীর পূজা করা হয়। এছাড়া, প্রত্যেক পূজায় বিশেষ করে জবা ফুল দেবীর বরণ কাজে ব্যবহার করা হয়।
জবা ফুলের পাতার রস মুখের ব্রণ, মেছতা দূর করে। চোখ ওঠা রোগ দূর করতে জবা ফুলের পাতার প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়। জবা ফুল বেটে রস করে পানিতে মিশিয়ে খেলে সর্দি ও কাশি থেকে সুস্থতা লাভ করা যায়। এ ফুলে এক প্রকার পদার্থ থাকে যার নাম রুলিক এসিড। যা ডায়াবেটিসের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
এশিয়ান প্যাসিফিক জার্নাল অফ ট্রপিক্যাল বায়োমেডিসিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, জবা ফুলের পুষ্টি উপাদান দিয়ে মূত্রনালীর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করার ওষুধ তৈরি হয়। জবা পাতা আর গরম পানি দিয়ে চা তৈরি করে খেলে রক্তের চাপ কমে। এছাড়া, খুশকির নিরাময়ের জন্য জবা পাতা ভালো কাজ করে।
উইকিপিডিয়ায বলা হয়েছে, জবা ফুল মালভেসি (গধষাধপবধব) পরিবারের। এর বৈজ্ঞানিক নাম হিবিস্কাস রোসা সিনেন্সিস (ঐরনরংপঁং ৎড়ংধ ংরহবহংরং)। বৈজ্ঞানিক ক্যারোলাস লিনিয়াস এই নাম দেন। লাতিন শব্দ রোসা সিনেন্সিস অর্থ চীন দেশের গোলাপ।
নানাগুণে সমৃদ্ধ জবা ফুল
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/