Site icon suprovatsatkhira.com

খেলোয়াড়দের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন শরীর সুস্থ রাখতে খেলাধূলার বিকল্প নেই

বাহলুল করিম: সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন বলেছেন, একটি মাদ্রাসা দল হয়ে তাদের যে অর্জন এটা সাতক্ষীরাবাসীর জন্য গৌরব। আমরা অনেক সময় মনে করি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা মূল ধারা থেকে বাইরে। আপনারা নিশ্চয় খেয়াল করেছেন বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় সুচিন্তিতভাবে চেষ্টা করছেন মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাকে মূল ধারায় নিয়ে আসতে। আমাদের সব কাজ সমন্বিতভাবে করতে হবে।
শনিবার (২১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় স্কুল ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৮ এর জাতীয় পর্যায়ে রানার্স আপ অর্জনকারী জি ফুল বাড়ি দরগাহ শরীফ আলিম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আসলে দুই ধারায় বিভক্ত। এটাকে আসলে সমন্বয় করতে হবে। মাদ্রাসায় ব্যাপক পরিমাণ শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করে। সুতরাং তাদের অবদান অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। মাদ্রাসাকেও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে হবে। তাদেরকে মূল ধারায় আসতে হবে। মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের মতো একটি ব্যাধি ঢুকে পড়েছে। এটা মেকাবেলা করার জন্য খেলাধূলা বড় একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে। শরীর সুস্থ রাখার জন্য ধর্মেও বলা হয়েছে। খেলাধূলা শরীর ও মনকে প্রফুল্ল রাখে। খেলা মানুষের কর্মস্পৃহা ও কর্মোদ্দীপনা বাড়ায়। তাই বেশি বেশি খেলার প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে। আমি আশা করবো শধু সাতক্ষীরার মাদ্রাসাতেই নয় সারা দেশের অন্যান্য মাদ্রাসাগুলোতেও এর পরিব্যাপ্তি ঘটবে। জি ফুল বাড়ি দরগাহ শরীফ আলিম মাদ্রাসা যে অর্জন করেছে তা অন্যান্য মাদ্রাসার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, সাতক্ষীরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ একটি জেলা। সুন্দরবন, আম ও চিংড়ি মাছে সমৃদ্ধ এই জেলায় ফুটবল খেলাটা অব্যাহত থাকবে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমাদেরে মন মানসিকতা এগোচ্ছে না। তাই আমাদের মন-মানসিকতা আরও ভাল করতে হবে। এখন আমরা মিডিল ইনকাম দেশের তালিকায় যেতে চলেছি। আগামী ২০২৫-৩০ সালের মধ্যে পরিবহন ব্যবস্থা একটা ভাল জায়গায় যাবে। শধু অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হলেই চলবে না আমাদের মানসিকতাও বদলাতে হবে। তাই আমরা আমাদের দেশকে বেশি বেশি ভালবাসব এবং আমাদের পতাকাকে ভালবাসব ও শুধুমাত্র আমাদের দেশের পতাকাই উড়াবো। দেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরার জন্য খেলাধূলা একটি বড় মাধ্যম হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় কোন স্পোর্টস কমপ্লেক্স নেই। তাই আমরা এখানে একটি স্পোর্টস কমপ্লেক্স করার চেষ্টা করছি। সাতক্ষীরা জেলার ক্রীড়াকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। আজকে চারটি ট্রফি আছে ভবিষ্যতে যেন সবগুলো টেবিলে ট্রফি থাকে সে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। ট্রফিতে যেন আমাদের মুখগুলো ঢেকে যায়। খেলোয়াড়দের পড়াশোনার দিকটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। তারা যেন খেলার পাশাপাশি তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যায়।
অনুষ্ঠানে খুলনা বিভাগীয় অ্যাম্পেয়ারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাতক্ষীরা অ্যাম্পেয়ারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান মুকুলের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মাহবুবুর রহমান, সাতক্ষীরা পৌর মেয়র মো. তাজকিন আহমেদ চিশতি, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফেসর ডা. মো. সহিদুর রহমান ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বাবু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ও জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়র সিরাজুল ইসলাম খান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তাজকিন আহমেদ চিশতি বলেন, আজকের টিমের প্রতি শুভকামনা রইল। সাতক্ষীরা অঞ্চল থেকে বিস্ময়কর খেলোয়াড় তৈরি হয়। আমিও খেলোয়াড় ছিলাম। আমরাও খেলা করেছি। আমাদের এখানে কোন ইনডোর নেই। আর্থিক সহযোগিতা পেলে এটা নির্মাণ করা সম্ভব হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, স্বপ্ন কিন্তু ওটাই যেটা আমরা জেগে দেখি। যেটা ঘুমিয়ে দেখি সেটা কিন্তু স্বপ্ন নয়। স্বপ্ন ওটাই যেটা আমাদের ঘুমাতে দেয় না। বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক সাতক্ষীরার সাবিনা বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। খেলোয়াড় তৈরির একটি উর্বর ক্ষেত্র আমাদের সাতক্ষীরা জেলা। খেলাধূলায় আমরা যে উন্মাদনা দেখায় তাতে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ডে সেরা পয়েন্ট অর্জন করতে পারবো। সাতক্ষীরা জেলায় ক্রীড়াকে আরও গতিশীল করতে আমার পরিষদ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মো. আহম্মাদ আলী সরদার, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির খান বাপ্পি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিরণ¥য় সরকার, ট্রেজারার শেখ মাসুদ আলী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জি ফুল বাড়ি দরগাহ শরীফ আলিম মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মো. জেদ্দাল হাসান (ক্যাপ্টেন), মো. মেহেদী হাসান, মো. ফাহিম ইকবাল, মো. মাছুম বিল্লাহ, মো. জাহিদ হাসান, মো. আবদুল্লাহ, মো. মমিন হোসেন, মো. হাবিউল্লাহ বাশার, মো. হাসানুর রহমান, মো. আল-আমিন, মো. শফিকুল ইসলাম, মো. মাহফুজুর রহমান, মো. জাহিদুল ইসলাম, মো. সুমন রেজা, মো. কামরুল ইসলাম, মো. আরিফুল ইসলাম, মো. ইকবাল হোসেন ও মো. আবু রায়হানকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের শেষে আঞ্চলিক পর্যায়ের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি, জাতীয় পর্যায়ের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি, শ্রেষ্ঠ জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ট্রফিসহ মোট চারটি ট্রফি সংরক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version