Site icon suprovatsatkhira.com

কোন্দল থাকলেও আন্দোলন-সংগ্রামে আ’লীগের সবাই একাকার হয়ে যায়

সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা অন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ছিলেন সাতক্ষীরা কলেজ ছাত্রলীগের কমান রুম সম্পাদক। অংশ নিয়েছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। ১৯৭২ সালে পারুলিয়া ইউনিয়ন রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হন। ১৯৭৩ সাল থেকে পরপর চার মেয়াদে পারুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার প্রতিবাদ করায় তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় সামরিক জিয়া সরকার। ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ১৯৮৬ সালে ও ১৯৯১ সালে দেবহাটা-কালিগঞ্জ (তৎকালীন) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ২০১৫ সালে সরাসরি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পাশাপাশি ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পালন করেন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্বও। ‘সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আওয়ামী লীগ’ নিয়ে কথা বলেছেন সুপ্রভাত সাতক্ষীরার সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এসএম নাহিদ হাসান, নুরুল হুদা ও আরিফুল ইসলাম রোহিত-

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: কেমন আছেন?
মুনসুর আহমেদ: ইনশাআল্লাহ ভাল আছি।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার জন্ম, পূর্ব পুরুষদের আদি বসতি, পরিবার-পরিজন সম্পর্কে জানতে চাই-
মুনসুর আহমেদ: ১৯৪৮ সালের ১৯ অক্টোবর মাঝ পারুলিয়া গ্রামে আমার জন্ম। আমার পিতার নাম মরহুম হামিজউদ্দিন গাজী। আমার মায়ের নাম মহরুমা দেলজান বিবি। আমরা তিন ভাই চার বোন ছিলাম। এর ভিতর এক ভাই মারা গেছে এবং এক বোন মারা গেছে। আমি আমার বাবাকে দেখি নি। আমার মাত্র ২৮ দিন বয়স হলেই বাবা মারা যান।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার শিক্ষা জীবন-
মুনসুর আহমেদ: পারুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার মধ্য দিয়ে আমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি হয়। এখান থেকেই পঞ্চম শ্রেণি পাশ করি। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে নলতা হাইস্কুলে ভর্তি হই। সেখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া পড়ি। পরে সাতক্ষীরা পিএন হাইস্কুলে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে ১৯৬৫ এস.এস.সি পাশ করি। সাতক্ষীরা কলেজ থেকে ১৯৬৭ সালে আইকম ও ১৯৬৯ সালে বিকম পাশ করি। এখন যেটা সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ। লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি ভাল ফুটবল খেলাতাম। তাই খেলার জন্য মহাকুমাব্যাপী আমার বেশ সুনাম ছিলো।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: পেশাগত জীবনে কী করতেন?
মুনসুর আহমেদ: পেশাগত জীবনে পৈতিৃক জমিজমা দেখাশুনা করতাম। এখনো তা অব্যাহত রয়েছে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা- সেই সময়কার কিছু কথা বলতেন?
মুনসুর আহমেদ: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশে আমি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। ভারতের চাকার্তা শহরের তাণ্ডুয়া ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৯নং সেক্টরে যুদ্ধ করি। যুদ্ধকালীন সময়ের একটি ঘটনা আমাকে খুব কষ্ট দেয়। তখন রমজান মাস, অবশ্য তারিখটা মনে নেই। চার দিন একটানা যুদ্ধ হয়। শেষের দিন যে যুদ্ধ হয়- সেখানে ভাতশালা নীলকুঠিরের পাশে শাখরা-কোমরপুরে থাকা পাকিস্তান আর্মিদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। কুলিয়ার গোলজার আমাদের সহযোদ্ধা- সে আমার পাশেই ছিলো। সেই দিন যুদ্ধে গোলজার মারা যায়। ওর মৃত্যু আমাকে খুব পীড়া দেয়। এসএলআরের গ্যাসে চেম্বার ব্লক হয়ে যায়। আমি বলেছিলাম নীল কুঠিরের প্রচীরের উপর দিয়ে যেন মাথা দেখা না যায়। কিন্তু গোলজার কথা না শুনে পা দিয়ে লাথি মেরে গ্যাস চেম্বারটা খুলতে গিয়েছিলো। তখন একটা চাইনিজ রাইফেলের গুলি এসে গোলজারের মাথায় লাগে, এতে সে শহীদ হয়। এ দৃশ্য এখনো আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার রাজনীতিতে হাতে খড়ি কিভাবে?
মুনসুর আহমেদ: আমি ১৯৬৫ সালে ছাত্রলীগে যোগদান করি। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা অন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমি ছাত্রলীগে সক্রিয় রাজনীতি শুরু করি। ১৯৬৬ সালেই আমি তৎকালীন সাতক্ষীরা কলেজ ছাত্রলীগের কমানরুম সম্পাদক নির্বাচিত হই। এভাবেই আমার ছাত্র রাজনীতি চলতে থাকে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনি যখন ছাত্র রাজনীতি করতেন তখনকার রাজনীতি কেমন ছিলো- আর এখন কেমন মনে হয়?
মুনসুর আহমেদ: আসলে এগুলো বলাও কঠিন। আমরা যখন ছাত্র রাজনীতি করতাম তখন কোন স্বার্থ ছিলো না। দেশ, জাতির জন্য ছাত্র রাজনীতি করতাম। নেতার নির্দেশে পার্টি করেছি। ছাত্রদের নিয়ে মিছিল, মিটিং করেছি। বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য রাজনীতি করেছি। তবে এখনকার সময়টা বিশ্লেষণ করা কঠিন। তখনকার রাজনীতিতে কোন চাওয়া পাওয়া ছিলো না। কিন্তু এখনকার রাজনীতিতে অনেক চাওয়া পাওয়া থাকে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনি রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন- আপনার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে জানতে চাই-
মুনসুর আহমেদ: ১৯৭২ সালে পারুলিয়া ইউনিয়নের রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছিলাম। ১৯৭৩ সাল থেকে পরপর চার মেয়াদে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। ১৯৭৫ সালে যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয় তখন সাতক্ষীরায় আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে, এ হত্যার প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নেমেছিলাম। এ কারণে সামরিক জিয়া সরকার আমার উপর দীর্ঘ ২২ মাস অমানুষিক নির্যাতন চালায়। তখন জেলে গিয়েছি। ১৯৭৭ সালে জেল থেকে মুক্তি পায়। ১৯৭৭ সালে জেল থেকে বের হয়ে ওসমানী ও কামাল হোসেনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। ১৯৮৬ সালের ৭ মে ৩য় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেবহাটা-কালিগঞ্জ (তৎকালীন) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দেবহাটা-কালিগঞ্জ (তৎকালীন) আসন থেকে সংসদ সদস্য পুনরায় নির্বাচিত হই। ১৯৯৬ সালে অল্প ভোটে পরাজয় বরণ করি। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ২০১৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সরাসরি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হই। পাশাপাশি ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলাম। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর জামায়াত-শিবির হত্যার উদ্দেশ্যে পারুলিয়া আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস থেকে আমাকে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি বেঁচে যায়। তখন থেকে আমার হাটুর সমস্যা।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: বর্তমানে আপনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই পদে থেকে রাজনীতি কেমন উপভোগ করছেন?
মুনসুর আহমেদ: যখন থেকে রাজনীতি শুরু করেছি তখন থেকেই দলের জন্য যেটা ভাল সেটা করে যাচ্ছি। নানা আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছি। দলকে সুসংগঠিত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছি। আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল এখানে অনেকে অনেককে পছন্দ করে, অপছন্দও করতে পারে। এটা স্বাভাবিক। জাতির জনকের আদর্শের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের মূল শক্তি তার নেতা-কর্মী। যখনই দলের দুঃসময় নেমে আসে তখন সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবেলা করে। আওয়ামী লীগের জন্ম আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে- তাই আন্দোলন, সংগ্রামে সবাই একাকার হয়ে যায়। এটা খুব ভাল লাগে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: অবসরে কোন স্মৃতিটি আপনার সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে?
মুনসুর আহমেদ: রাজনীতিতে উত্থান-পতন থাকবে এটাই স্বাভাবিক। অবসরে রাজনৈতিক উত্থান ও পতনের বিষয়টি খুব বেশি মনে পড়ে। এছাড়া টিভিতে খবর দেখে, বই পড়ে এবং নেতা-কর্মীদের সাথে সময় দিয়ে তাদের মনের কথা শোনার চেষ্টা করি।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: জাতির জনকের হত্যার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি ঝিমিয়ে পড়ে- পরে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে উজ্জীবিত করে, এ বিষয়ে কিছু বলেন-
মুনসুর আহমেদ: বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর জিয়া সরকার সংবিধান পরিবর্তন করে দেশে রাজনীতি বন্ধ করে দেন। পরে তিনি আবার ঘরোয়া রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৮০ সালে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সেখানে সৈয়দ কামাল বখত্ সাকীকে সভাপতি করা হয় এবং আমাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। সারা দেশে তখন সাংগঠনিক কর্যক্রম চলমান ছিলো। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আসেন- তারপর তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পরবর্তী সাতক্ষীরায় যে সহিংসতা ঘটেছিল- আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবেলা করতে কতটা সক্ষম হয়েছিলো?
মুনসুর আহমেদ: ২০১৩ সালে প্রথমে ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রভাষক মামুনকে হত্যা করা হয়। সেদিন অঙ্গ ও সংগঠনের প্রায় ৩ হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে আমরা রাজপথে ছিলাম। তখনকার পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর মোল্লা এবং সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমাদের মিস গাইড করে। বেলা ২টার দিকে আমরা রাজপথ ছেড়ে দেই। পরে মামুনকে হত্যা করা হয়। শুধু তাই না ২০১৩ সালের পর আওয়ামী লীগের ১৬ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে প্রশাসনের সহায়তায় সব ঠিক হয়ে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় বর্তমান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে কিছু বলুন-
মুনসুর আহমেদ: আওয়ামী লীগ এখন অনেক শক্তিশালী। ১৯৭৩ সালের পর দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সাতক্ষীরা-২ আসনে পুনরায় জয় লাভ করে। এতে বোঝা যায় দল ভাল করছে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: দীর্ঘ নয় বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হিসেবে দলকে কতটুকু শক্তিশালী করতে পেরেছেন?
মুনসুর আহমেদ: আমাদের প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলায় কমিটি আছে। শুধু আওয়ামী লীগ না এর সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনগুলোও সক্রিয় রাজনীতি করছে। সাংগঠনিক অবস্থাও ভাল। সাতক্ষীরাতে যাকেই নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে- তার পক্ষে কাজ করে আমরা নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবো।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: নানা কারণে বিভিন্ন সময় সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। শুধু জেলা পর্যায়ে নয় এই কোন্দল উপজেলায়, এমনকি তৃণমূলে ছড়িয়ে পড়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে কী না?
মুনসুর আহমেদ: বড় দল তাই নানা মতামত থাকতে পারে। কিন্তু এসব মতবিরোধ নির্বাচনে কোন প্রভাব পড়বে না। মনে রাখতে হবে কোন্দল থাকলেও নির্বাচন, আন্দোলন, সংগ্রামে আওয়ামী লীগের ভিতর কোন বিরোধ থাকে না এবং আগামীতেও থাকবে না ইনশাল্লাহ।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: এই কোন্দল দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রভাব ফেলছে কী না?
মুনসুর আহমেদ: না।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: জেলা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এই কোন্দল নিরসনে দলীয়ভাবে কী ধরেণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে-
মুনসুর আহমেদ: যেটুকু কোন্দল আছে- তা নিরসনে আমরা দলীয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে প্রতি উপজেলার নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: এই কোন্দল নিরসন আদৌ সম্ভব-
মুনসুর আহমেদ: আমি তো আগেই বললাম। কোন্দল নিরসনে আমরা দলীয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হয়েছে- দলের হাইকমান্ড থেকে কোন্দল নিরসনে কী ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে-
মুনসুর আহমেদ: দলের সভানেত্রী ইতোমধ্যে আমাদের নিয়ে দুটি বর্ধিত সভা করেছেন। আমাদের সুবিধা অসুবিধা শুনেছেন। দলে কোন কোন্দল থাকলে তা নিরসনের নির্দেশ দিয়েছেন। আর নির্বাচন নিয়ে কাজ করা নির্দেশ দিয়েছেন।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ কী ভাবছে?
মুনসুর আহমেদ: আমরা আশাবাদী- আগামী সংসদ নির্বাচনে ৪র্থ বারের মত সরকার গঠন করতে পারলে ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে পারবো। কারণ পরপর দুই মেয়াদে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে তার অভূতপূর্ব। যে দিকে তাকাবেন সেখানে উন্নয়ন। দেশের দরিদ্র মানুষ কোন না কোন ভাতার আওতায় এসেছে। একটি বাড়ি একটি খামার শেখ হাসিনার একটি সফল প্রকল্প। বিদ্যুৎ খাতে আমরা এখন অনেক এগিয়ে। আমরা ৫৭তম দেশ হিসেবে মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছি। নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু করছি। আমরা আশা করি এধারা অব্যাহত থাকবে। এজন্য নৌকাকে বিজয়ী করা ছাড়া বিকল্প নেই।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে জামায়াত-শিবির অনুপ্রবেশ করছে- এমন অভিযোগ প্রায় শোনা যায়- এই সমস্যা সমাধানে কী ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছেন?
মুনসুর আহমেদ: জামায়াত-শিবিরের সাথে কোন আপোষ নেই। যারা দেশের স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না তাদের দলে টানার কোন প্রশ্নই আসে না। এ ব্যাপারে আমরা কঠোর আছি। সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন কমিটিতে কিভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে?
মুনসুর আহমেদ: তৃণমূলে ত্যাগী নেতাদের কাউন্সিলের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হয়। কর্মীরাই তাদের নেতা নির্বাচন করে থাকে। কেন্দ্র থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত এভাবে চলে আসছে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: দলীয় সদস্য নবায়ন চলছিল, এখন কী অবস্থা?
মুনসুর আহমেদ: দলের সাধারণ সম্পাদক সদস্য নবায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন- তা বর্তমানেও চলমান আছে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: দলের সভাপতি হিসেবে সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মুনসুর আহমেদ: সাতক্ষীরার রাজনীতি ভাল চলছে। সকল স্তরের নেতা-কর্মীরা এখন নির্বাচন নিয়ে ভাবছে। কিভাবে আবারো নৌকার বিজয় নিশ্চিত করা যায় এটাই এখন আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। দুই একটি ছোটখাটো সমস্যা ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা আগের যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: নতুন ও বর্তমান নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে কী ধরণের পরামর্শ দেবেন?
মুনসুর আহমেদ: রাজনীতিতে টিকে থাকতে গেলে ইচ্ছা শক্তি থাকতে হবে। ফায়দা লুটার জন্য রাজনীতিতে আসলে তারা একদিন হারিয়ে যাবে। টিকে থাকতে হলে আদর্শ বুকে ধারণ করে চলতে হবে। কর্মীবান্ধব হতে হবে। দলের প্রতি অনুগত থাকতে হবে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: বিভিন্ন উপজেলায় নেতাদের সাথে কর্মীদের দূরত্ব দেখা যায়। এসব দূরত্ব কমানোর জন্য কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় কী না?
মুনসুর আহমেদ: ইতোমধ্যে আমরা সেগুলো নিরসন করেছি। দল এখন নির্বাচন নিয়ে ভাবছে। নেতা-কর্মীরাও নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নমুখী সরকার- তো সরকারের উন্নয়ন মানুষের কাছে তুলে ধরতে জেলা আওয়ামী লীগ কী ধরণের ভ‚মিকা রাখছে-
মুনসুর আহমেদ: ওয়ার্ড থেকে শুরু করে সকল স্তরে কর্মী সভা, উঠান বৈঠক, লিফলেট বিতরণ, পোস্টারিং করে জনগণের সামনে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন-
মুনসুর আহমেদ: আগামী সংসদ নির্বাচনে আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী। নেত্রী চাইলে সাতক্ষীরা-৩ অথবা ৪ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে জনগণকে সেবা করতে চাই।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনি এমপি হলে কোন কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দেবেন?
মুনসুর আহমেদ: সন্ত্রাসমুক্ত, জঙ্গীমুক্ত ও মাদকমুক্ত সাতক্ষীরা গড়ে তুলতে চাই।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার প্রিয় ব্যক্তিত্ব-
মুনসুর আহমেদ: বঙ্গবন্ধু আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব। এছাড়া প্রয়াত সৈয়দ কামাল বখত সাকীও আমার প্রিয়।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মুনসুর আহমেদ: সুপ্রভাত সাতক্ষীরাকেও অনেক ধন্যবাদ।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version