Site icon suprovatsatkhira.com

কপিলমুনিতে রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

জি এম মোস্তাক আহমেদ, কপিলমুনি: কপিলমুনি হাট-বাজারে বাংলাদেশ সরকার ও এডিপি’র অর্থায়নে আরবান সেন্টার স্কিম সিটি রিজিয়ন ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের (সিআরডিপি) আওতায় ড্রেন ও কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে কাজের মান ভাল থাকলেও বর্তমানে যেনতেন ভাবে চলছে কাজ শেষের প্রক্রিয়া।
সরেজমিনে কপিলমুনি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারের অংশে ড্রেন নির্মাণ কাজ শেষ হলেও রাস্তা ঢালাইয়ের কাজ এখনও শেষ হয়নি। তবে কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণের জন্য সীমানা নির্ধারণ পূর্বক রাস্তার দু’পাশ দিয়ে ইট বসিয়ে রাখা হয়েছে। অপর পাশে ধান্য চত্বর হয়ে প্রেসক্লাব ও পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন রাস্তাটি ঢালাইয়ের কাজ চলছে। কিন্তু সেখানেও রয়েছে শুভংকরের ফাঁকি। তার অপর প্রান্তে অবস্থিত পাইকগাছা-খুলনা প্রধান সড়ক থেকে গ্রামীণ ব্যাংক হয়ে কলেজ অভিমুখে রাস্তাটিতে কাদা মাটির উপর নিম্ন মানের ইটের খোয়া ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে প্রথমে ৬-১২ ইঞ্চি পরিমাণে লোনা বালু দিয়ে ইটের সোলিং দেওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খামখেয়ালী ও অপরিকল্পিতভাবে তাদের ইচ্ছা খুশিমত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্ষা মৌসুম ঘিরে কপিলমুনি বাজারের অভ্যন্তরে চলাচলে পথচারীদের যেন দুর্ভোগের অন্ত নেই। নির্দিষ্ট সময়ের এক বছর আগে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আবার ড্রেনগুলোর ভিতরের ময়লা আবর্জনা রেখেই তা ঢাকনি ঢালাই এর কাজ করেছেন। কোথাও কোথাও ড্রেনগুলো স্বর্পাকৃতিতে করা হয়েছে। সঙ্গত কারণে বাজার উন্নয়নের স্বার্থে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলছে না। অন্যদিকে দক্ষিণ খুলনার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনি বাজার বর্ষার পানিতে তলিয়ে সেখানে স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশংকা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ সচেতন এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে কপিলমুনির বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ এগিয়ে নিতে না পারায় বর্ষা মৌসুমে খানা-খন্দকে পানি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। এদিকে উন্নয়ন কাজের মন্থর গতি, কংক্রিটের রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণে নি¤œ মানের সামগ্রী ব্যবহার করে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে তারা। আর দীর্ঘ দিন পর বাজার উন্নয়নে চলমান কাজের স্বার্থে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে তাই মুখ খুলছে না কেউ।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আইইএল অ্যান্ড এফটি (জভি) ও ফয়সাল ট্রের্ডাসের পক্ষে কপিলমুনি হাট-বাজার উন্নয়ন কাজের তদারকিতে নিয়োজিত ম্যানেজার মো. এসকেন্দার শেখ বলেন, সব জায়গায় সিডিউল অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। যেখানে যে নিয়মে কাজ করার কথা রয়েছে সেখানে সে ভাবে করা হচ্ছে। প্রায় ৮০ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আশা করছি বাকি কাজ দু’ই এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে।
প্রসঙ্গত, এলজিইডি খুলনার তত্ত্বাবধানে ৭ কোটি ১৭ লক্ষ ৪৩ হাজার ২ শ’ ৮৪ টাকা ৮৯ পয়সা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ পায় খুলনার রূপসা উপজেলার যোগীহাটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আইইএল অ্যান্ড এফটি (জভি)। ২০১৬ সালের ৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এ কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি। কিন্তু নির্দিষ্ট মেয়াদের প্রায় ১ বছরেরও বেশী সময় অতিবাহিত হলেও প্রথম থেকেই মন্থর গতি, পরিকল্পনাহীনতা, অনিয়ম থেকে শুরু করে নানা সংকটে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অর্ধেক কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের আওতায় কপিলমুনি হাট-বাজার উন্নয়নে জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন ও সুষ্ঠু চলাচলের জন্য কংক্রিটের সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি বাজারের বিভিন্ন স্থানে একযোগে খুঁড়ে রাখলেও একই গতিতে কাজ করতে না পেরে পিছিয়ে পড়ে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে কাজ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ময়লা পানি-কাদার উপর ঢালাইয়ের কাজ করছে। কখনো কখনো বৃষ্টির মধ্যেও ঢালাইয়ের করা হচ্ছে। এতে কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। পক্ষান্তরে বাজার অভ্যন্তরে এক সাথে বিভিন্ন এলাকা খুঁড়ে মাটি উঁচু-নিচু করে রেখে দক্ষিণ খুলনার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্রটির স্বাভাবিক গতিতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। প্রথম দিকে সদরের পালপাড়া ও কালীবাড়ি সড়ক দু’টির নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে গেলেও ব্যস্ততম কলেজ রোড, কাপড় পট্টি, কসমেটিক পট্টিসহ বাজার অভ্যন্তরের অধিকাংশ সড়কের কোন কাজই শুরু করতে পারেনি তারা। আর কোন কোন সড়কে কাজ শুরু করলেও তা শেষ না করে আরেকটি শুরু করেছেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের এমন খামখেয়ালীপনা ও পরিকল্পনাহীনতায় এ বর্ষা মৌসুমে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কপিলমুনিবাসী। ভ্যান, সাইকেল থেকে শুরু করে মালবাহী কোন বাহনই ঢুকতে পারছে না বাজার অভ্যন্তরে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজের এমন ছন্নছাড়া গতিতে মোটেও ভাল নেই কপিলমুনির মানুষ। তারা এর প্রতিকার চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version