জুন ১২, ২০১৮
জেলা বিএনপির কার্যক্রমে স্থবিরতা
আহসানুর রহমান রাজীব: সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির ৯টি অঙ্গ ও ২টি সহযোগী সংগঠনের কমিটি থাকলেও নেই সাংগঠনিক কোন কর্মকা-। গেল দুই বছর কেন্দ্র ঘোষিত কোন আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে দেখা যায়নি জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের। ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে জেলা বিএনপি’র কর্মী সম্মেলন চলাকালে আভ্যন্তরীন কোন্দলকে কেন্দ্র করে জেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ আমানকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় তৎকালিন জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্র। আমান হত্যা মামলায় জেলা বিএনপির কয়েক জন শীর্ষ নেতা সহ ৮৯ জন আসামীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এরপর থেকেই জেলায় বিএনপির কার্যক্রম অনেকটা স্থবির অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া, ২০১৩-১৪ সালে সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় বিভিন্ন নাশকতা মামলায় আসামি হয়েছেন দলটির তৃণমুলের শতশত নেতাকর্মী। এসব মামলায় গ্রেফতার এড়াতে দীর্ঘদিন পলাতক রয়েছেন দলটির বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা। এসবের মধ্যেই সম্প্রতি জেলা বিএনপি নতুন কমিটি ঘোষণা করা হলেও, সভাপতির বাড়িতে গোপনে বৈঠক ছাড়া দলটির নেই কোন সাংগঠনিক কার্যক্রম। যদিও বর্তমান কমিটির নেতার বলছেন, পুলিশের মামলা-হামলায় সঙ্কটে পড়া জেলা বিএনপিকে শক্তিশালী করতে পুনর্গঠণ কাজে হাত দিয়েছেন তারা। সম্প্রতি জেলা বিএনপির অন্যতম দুটি অংগসংগঠন যুবদল ও সেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটিও গঠণ করা হয়েছে। জেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মীর তাজুল ইসলাম রিপন বলেন, তাদের কিছু না জানিয়ে সম্মেলন ছাড়া হঠাৎ করেই কেন্দ্র থেকে যুবদলের কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ। নবগঠিত জেলা যুবদলের সভাপতি আবু জাহিদ ডাবলু সুপ্রভাত সাতক্ষীরাকে বলেন, দল পুনর্গঠনের জন্য কাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত আশানুরূপ কিছু দেখাতে পারেনি বিগত কমিটি। দলকে আরও বেশি সংগঠিত করতে ঈদের পর যুবদলের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নতুন কমিটি গঠণ করা হবে। এসব কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের মুল্যায়ন করা হবে। জেলা যুবদলের তালা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিউর রহমান শফি সুপ্রভাত সাতক্ষীরাকে বলেন, আমরা নির্বাচন মুখি দল কিন্তু বর্তমান সরকার বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দুরে রাখতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমাদের বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা পুলিশের ভয়ে এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এসবের মধ্যেও আমরা সংগঠিত থাকার চেষ্টা করছি। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তাকে সাথে নিয়েই বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে চাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির সাবেক এক শীর্ষ নেতা বলেন, সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিব ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার হোসেন গ্রুপের বিরোধ দির্ঘ দিনের। তাদের এই গ্রুপিং এর জন্যই আমরা আমানকে হারিয়েছি। তাদের বিরোধের কারনেই ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে কাউন্সিল সম্মেলন ছাড়া বর্তমান জেলা কমিটি হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবের পচ্ছন্দে। হাবিবের একক আধিপত্যের কারনে জেলা বিএনপির আজ এই হাল। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তরিকুল হাসান সুপ্রভাত সাতক্ষীরাকে বলেন, দলের সবচেয়ে কঠিন সময়ে দায়িত্ব পেয়েছি। আমাদের প্রথম কাজ ছিল ভাঙ্গাচোরা বিএনপিতে পুণর্গঠন করা সেটি চলমান রয়েছে। কিন্তু একের পর এক মিথ্যা মামলায় আমার বেশিরভাগ সময় কেটেছে কারাগারে। তার পরও বর্তমান জেলা বিএনপি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সু-সংঘঠিত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, গেল ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে সাতক্ষীরার দুটি পৌরসভা সহ একাধিক ইউপিতে বিএনপি মোননিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। সম্প্রতি আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে কর্মী সমাবেশ করে তৃনমূল নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেছি। বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় বিএনপি কিছুটা সংকট কালিন সময় পার করছে। আমরা আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে নেত্রীকে মুক্ত করে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। কেন্দ্রের নির্দেশ পেলেই ঈদের পর আন্দোলনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নেব। নব গঠিত যুবদল ও সেচ্ছাসেবকদলের কমিটি নিয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এদিকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, কমিটি নির্বচনের ক্ষেত্রে ত্যাগী, যোগ্য ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব উঠে না আসায় জেলা বিএনপির আজ এই অবস্থা। গুরুত্বপুর্ণ পদে ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতা নির্বাচন করা হলে জেলা বিএনপি আবারো সাংগঠনিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে করেন তারা। 8,423,880 total views, 7,653 views today |
|
|
|