Site icon suprovatsatkhira.com

সাকিবরা দেখালেন টি-টোয়েন্টি বোলারদের খেলা

গত জুনে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতার পর পাকিস্তানের বোলিং কোচ আজহার মেহমুদ ক্রিকইনফোকে দারুণ একটা কথা বলেছিলেন, ‘ব্যাটসম্যানরা ম্যাচ জেতায়, কিন্তু বোলাররা জেতায় টুর্নামেন্ট।’ পাকিস্তানের সাবেক এই অলরাউন্ডারের এই নীতি কিন্তু অনেক ক্রিকেট দলেরই মূলমন্ত্র হয়ে উঠেছে। আইপিএলে এই মন্ত্র অনুসরণ করেই সানরাইজার্স হায়দরাবাদ দারুণ করছে। একের পর এক ম্যাচ জিতে তারা এখন আইপিএলের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। চেন্নাইয়ের সঙ্গে আজকের আগে পর্যন্ত নেট রান রেটে পিছিয়ে থাকলেও আজ রাজস্থানকে হারিয়ে শীর্ষেই উঠে এসেছে তারা।

কেবল এবারই নয়, ২০১৬ সালে হায়দরাবাদ আইপিএলের শিরোপা জিতেছিল টুর্নামেন্টের ‘সবচেয়ে বাজে’ মিডল অর্ডার নিয়ে। কিন্তু সেবারও বোলিংয়ে তারা ছিল সেরা। ২০১৮ সালেও সেই নীতি থেকে সরে আসেনি তারা। নিলামের সময় ভালো বোলার, উইকেট নেওয়া বোলারদের ওপরই বিনিয়োগ করেছে, যার ফলটা তারা পাচ্ছে ভালোভাবেই। টানা তিনটা কম স্কোরের ম্যাচ জিতল তারা। আইপিএলে যেখানে পরে ব্যাটিং করা দল জিতে চলেছে, হায়দরাবাদ দেখিয়ে দিয়েছে, ভালো বোলিং আক্রমণে পরে বোলিং করেও প্রতিপক্ষকে আটকে ফেলা যায়।

বোলিংয়ের ওপর বেশি জোর দেওয়াটা কাকতালীয় নয়। পুরোপুরি পরিকল্পিত। নিলামের সময়ই আগের দুই মৌসুমে তাদের সেরা বোলার ভুবনেশ্বর কুমারকে রেখে দেয় তারা। বিদেশি কোটায় নতুন করে কেনে আফগানিস্তানের লেগ স্পিনার রশিদ খানকে। একই সঙ্গে তারা দলে নিয়েছে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, ক্রিস জর্ডান ও মোহাম্মদ নবীকে। সঙ্গে আছেন পেসার বিলি স্ট্যানলেককে। কোচ টম মুডির মাথায় সেই তত্ত্বটিই ছিল—‘বোলাররা জেতায় গোটা টুর্নামেন্ট।’

ভুবনেশ্বরের পাশাপাশি আরও কজন ভারতীয় পেসারদের দলে টানার কৌশল নিয়েছিল তারা নিলামে। টি নটরাজন, সিদ্ধার্থ কাউল, সন্দ্বীপ শর্মা, খলিল আহমেদ, বাসিল থাম্পি—তাঁরা কেউ খুব বেশি পরিচিত না হলেও তাঁদের দলে নেওয়ার কারণটা আর কিছুই নয়, অভিজ্ঞদের ‌‌‌‘ব্যাকআপ’ হিসেবে ব্যবহার করা। আইপিএলে প্রতিষ্ঠিত বোলাররাও খেই হারিয়ে ফেলেন। হায়দরাবাদের হাতে আছে প্রথম পছন্দের বোলারের একাধিক বিকল্প। যেন কেউ ঠিকমতো জ্বলে উঠতে না পারলে দ্রুত সেই জায়গা পূরণ করা যায়।

কেবল আইপিএলে নয়। অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি লিগ বিগ ব্যাশেও একই তত্ত্বের অনুসারী পার্থ স্করচার্স। জাস্টিন ল্যাঙ্গারের এই দল বিগ ব্যাশের সাত মৌসুমে শিরোপা জিতেছে তিনবার, রানার্সআপ হয়েছে দুবার। এই দলটির সাফল্যের পেছনে দারুণভাবেই আছেন তাদের বোলাররা।

এবারের আইপিএলে কাউল, রশিদ ও সাকিবের ওপর নির্ভর করে হায়দরাবাদ ১১৮ কিংবা ১৩২ রানের মতো স্কোরও সামলেছে। রাজস্থানের বিপক্ষে সামলাল ১৫১ রানের সংগ্রহ। এই তিন ম্যাচে এমন জয় দিয়ে হায়দরাবাদ বুঝিয়ে দিয়েছে, নিলামে তারা বোলারদের নিয়ে এতটা ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল কেন! বোলারদের প্রতি তাদের গুরুত্বের ফলটাও মিলেছে তাদের হাতেই।

এরই মধ্যে একটি প্রশ্ন উঠে গেছে, হায়দরাবাদ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেই এই মুহূর্তে সেরা বোলিং-শক্তি কি না! এমন কিছু বাড়াবাড়ি শোনালেও তাদের বোলিং-শক্তির ধরনটা কিন্তু এমনই। আইপিএলে হায়দরাবাদ এখন পর্যন্ত যে মানদণ্ডগুলো পরিপূর্ণ করেছে, সেগুলোর মাধ্যমে কিন্তু তারা সেরা টি-টোয়েন্টি বোলিং ইউনিট হিসেবে খুব কাছেই চলে গেছে। উইকেট নেওয়া, রান দেওয়ায় কৃপণতা আর বোলারদের বোলিং গড় আর স্ট্রাইক রেট—এই চারটি বিষয়ের তিনটিতেই দুর্দান্ত হায়দরাবাদ।

চার মানদণ্ডের তিনটি ঠিক থাকলেই যেকোনো দলের জন্য মৌসুমটা দুর্দান্তই যেতে পারে। আইপিএলে গত মৌসুমে পুনে সুপারজায়ান্টস কিংবা ২০১৭ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ঢাকা ডায়নামাইটস—এই মানদণ্ডগুলো ঠিক রেখেই যথাক্রমে রানার্সআপ ও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। বিবিএলের বর্তমান শিরোপাধারী অ্যাডিলেড স্ট্রাইকারসও হায়দরাবাদের মতো তিনটি মানদণ্ড পরিপূর্ণ করেই সফল হয়েছিল।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বোলিংটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ, সেই ব্যাপারটিও হায়দরাবাদ নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে। শুরুর দিকে ২০ ওভারের ক্রিকেটকে যাঁরা কেবল ব্যাটসম্যানের খেলা বলতেন, হায়দরাবাদের সাফল্য তাঁদের অন্যভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। হায়দরাবাদ প্রমাণ করেছে, টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটসম্যানরা ম্যাচ জেতাতে পারেন, কিন্তু টুর্নামেন্ট জিততে বোলারদের লাগবেই। ক্রিকইনফো অবলম্বনে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version